ডেস্ক: আনোয়ার হোসেন (৪২) নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে বিয়ে হয় সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী গ্রামের আজমল আলীর মেয়ে শিপা বেগমের (৩৫)। বিয়ের পর খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান শিপা। এই সম্পর্ককে বাস্তবে রূপ দিতে স্বামীকে হত্যা করেন তিনি।
এ ঘটনার ১০ দিন পর মাহির সঙ্গে বিয়েড় পিড়িতে বসেন শিপা। স্বামী হত্যার অভিযোগে তাকে গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নগরের তালতলা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহত আনোয়ার হোসেন সিলেট জেলা বারের আইনজীবী। তার বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকায়। বাবার নাম রেসালত হোসেন (মৃত)। আনোয়ারের ছোট ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বুধবার সিলেটের আদালতে তার ভাবির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় শিপা বেগম ও বর্তমান স্বামী শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে আসামি করা হয়েছে। মাহিকে প্রথম ও শিপাকে দ্বিতীয় আসামিসহ আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর শিপা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্তু কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী। অপর এক আবেদনে নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের অনুমতিও চেয়েছেন তিনি। এ দুটি আবেদনের ওপর আগামী রোববার বা সোমবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, আনোয়ার হোসেন সিলেট নগরের তালতলা এলাকায় নিজ বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ছিলেন। কিন্তু তার অগোচরে শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এর জেরেই আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়।
আনোয়ার জানান, গত ৩০ এপ্রিল সেহেরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েন অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন। এদিন অভিযুক্ত নাইমারসহ কয়েকজন বাসায় আসে। পরদিন বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী শিপা বেগম নিহতের স্বজনদের জানান, আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিক কমে গিয়ে মারা গেছেন। পরে তাকে নিজ গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানতে পারে, পরকীয়ার জেরে আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করেন স্ত্রীসহ কয়েকজন মিলে। এ ঘটনায় সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে বিচারক হত্যার অভিযোগে দরখাস্ত মামলা করলে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩০২/১০৯/৩৪ ধারায় মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী জানান, আনোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় শিপা বেগম তার খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে বিয়ে করেন। তিনি কানাইঘাটের স্থানীয় বাসিন্দাঅ বর্তমানে নগরের উপশহর এলাকায় বসবাসকারী। এরপর থেকে আনোয়ারের পরিবারের সঙ্গেও শিপা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ থেকে তাকে সন্দেহ করছে অ্যাডভোকেট আনোয়ারের পরিবার।
মামলার বরাত দিয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহান বলেন, খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে শিপা বেগমের পরকীয়া ছিলো। এরই জেরে গত ৩০ এপ্রিল স্বামীকে হত্যার পর স্বজনদের জানায় ডায়বেটিস কমে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দাফনের ১০ দিনের মাথায় ওই নারী তার খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরীকে বিয়ে করে নগরের তালতলায় সংসার করছিলেন। এতে স্বজনদের সন্দেহ হয় আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।