বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: হজ মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সর্বোত্তম আমলের একটি। হাদিসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো- সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, হাজ-ই-মাবরূর (মাকবুল হজ্জ)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪২৯)
সামর্থ্যবান প্রত্যেকের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জীবনে তিনবার হজ পালন করেছেন। এরমধ্যে দুটি ছিল হিজরতের আগে এবং একটি হিজরতের পর। এই হজের (শেষোক্ত) সঙ্গে তিনি ওমরাও পালন করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৮১৫)
হজের মূল কার্যক্রম পালন করতে হয় ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত। এই সময়ে হাজিদের ধারাবাহিকভাবে কিছু কাজ করতে হয়। যারমধ্যে হজের তিনটি রোকনও অন্তর্ভুক্ত- ইহরাম বাঁধা (অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে হজ্জের নিয়ত করা), ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান করা এবং তাওয়াফ (তাওয়াফে ইফাদা অর্থাৎ তাওয়াফে জিয়ারাহ করা) করা।
এরমধ্যে আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে ৮ জিলহজ হাজিদের মক্কার হারাম শরিফ বা বাসা কিংবা মক্কায় অবস্থান করা হোটেল থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে রওনা হতে হয়। এদিন জোহরের নামাজের আগেই হাজিদের মিনায় পৌঁছাতে হয়। এরপর মিনায় অবস্থান করার পাশাপাশি জোহরের নামাজসহ ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং এই সময় পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
পরদিন ৯ জিলহজকে বলা হয় ‘ইয়াউমে আরাফা’ বা আরাফা দিবস। বিশেষ ফজিলতপূর্ণ এই দিনেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহান্নামিকে মুক্তি দেয়া হয়। এদিন আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় হজের মূল কার্যক্রম। যেখানে চারটি কাজ করতে হয়। প্রথমত, ফজরের পর মিনায় গোসল বা ওজু করে সকাল-সকাল আরাফার ময়দানের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। পাশাপাশি রওনা দেয়ার সময় তাকবির বলা- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
দ্বিতীয়ত, এদিন জোহরের আগেই হাজিদের আরাফার ময়দানে গিয়ে হাজির হতে হয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হয়। এটি হজের অন্যতম রোকন। তৃতীয়ত, এদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনার পাশাপাশি হাজিদের নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করতে হয়। সেই সঙ্গে তওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তসবিহ, তাহলিল ও রোনাজারিতে আত্মনিয়োগ করা। এ ছাড়া আরাফার দিন সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হওয়া। এরপর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হয়।
পরদিন ১০ জিলহজ হজের প্রধান কর্মব্যস্ত দিন। এদিন হাজিদের পাঁচটি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেগুলো হলো- মুজদালিফায় অবস্থান, পাথর সংগ্রহ, কঙ্কর নিক্ষেপ, কুরবানি করা, মাথা মুণ্ডন করা। এরমধ্যে ১০ জিলহজ মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে মরুভূমির বালুর ওপর অবস্থান করতে হয়। পাশাপাশি মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার আগে কিছু সময় অবস্থান করতে হয় এবং সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশে হাজিদের রওনা হতে হয়।
পাশাপাশি ১০ জিলহজ হাজিদের মিনায় জামরায় (শয়তানকে মারার জন্য) মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কঙ্কর সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসেই বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়, যা জোহরের আগেই সম্পন্ন করতে হয়। পরে মিনায় কুরবানির পশু জবাই করতে হয়।
এরপর হাজি মাথা মুণ্ডন করার মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হবেন। মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে হাজি ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। পরবর্তীতে ১১ ও ১২ জিলহজ মোট তিনটি কাজ করতে হয়।
হজের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত। ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কুরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে। পাশাপাশি ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করা এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা। তবে যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে, তবে তাকে তাওয়াফের পর আবার মদিনায় চলে আসতে হবে এবং মিনায় অবস্থান করতে হবে।
এ ছাড়া ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনার ময়দানেই রাতযাপন করা এবং যারা মিনা ত্যাগ করবেন তারা ১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগেই মিনা ত্যাগ করবেন। সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সে রাত (১৩ জিলহজ) মিনায় অবস্থান করা। উল্লেখ্য, যদি কেউ ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তাকে ১৩ জিলহজ ৭টি করে আরও ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।
সবশেষ সারা বিশ্ব থেকে আগত সব হজিদের নিজ নিজ দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে পবিত্র কাবা ত্যাগের আগে বিদায়ি তাওয়াফ করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ি তাওয়াফ হিসেবে আদায় হয়ে যায়।