-
গত রবিবার দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, তার বাবাকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে গত ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়।
সিআইডির ‘সিরিয়াস ক্রাইমের’ বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয় এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তিনি মারা গেলে তার পরিবার ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলার জন্য আবেদন করার কথা। কিন্তু সেটা তারা করেনি। তার সন্তানরা দেশের বাইরে থাকেন। সন্তানদের সঙ্গে তার কথা হয়নি। এখন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করবেন।’
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর বেঁচে থাকা বা মারা যাওয়ার ওপর ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশ থাকা না থাকা নির্ভর করছে। সে জন্য সিআইডিকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে সিআইডি একটি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে দাখিল করে। তদন্তে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। হারিছ চৌধুরী নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। এখন আরও অধিকতর তদন্ত হবে। তদন্তে যদি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় তা হলে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলা হবে। তবে মৃত্যুর বিষয়টি সুনিশ্চিত না হয়ে রেড নোটিশ তোলা হবে না বলে জানান তিনি।’
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, `হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে তার স্বজনদের সহযোগিতা পাননি। ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি পুলিশ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে সাভারের করবস্থান থেকে লাশ তোলার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অনুমতি পেলে লাশের ডিএনএ পরীক্ষা করাবে পুলিশ।’
সাভারের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আশিকুর রহমান জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর আসরের নামাজের পর ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে একজনকে দাফন করা হয়েছে। যার মরদেহ সামিরা নামে একজন নিয়ে আসে। সামিরা নিজেকে মৃত ব্যক্তির কন্যা হিসেবে পরিচয় দেন। পরে লাশটি দাফন করা হয়।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানান, লাশ আনার পর কবর দিতে তাড়াহুড়া ছিল স্বজনদের। লাশের গোসল দিয়েই আনা হয়েছিল। শুধু জানাজা আর কবর দেওয়া হয়েছিল। দাফনের দুই সপ্তাহ পর তার কয়েকজন আত্মীয় কবর দেখতে এসেছিলেন। তবে গত এক বছরের মধ্যে আর কেউ আসেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। গ্রেনেড হামলার মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন। ২১ আগস্টের মামলায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘খুন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ।’