বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : হৃদরোগ জটিল রোগগুলোর একটি। এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনসহ নানা কারণে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
হার্ট ফেউলিউর কেন হয় এবং এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তৌহিদুর রহমান ফারুক।
হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা অর্থাৎ রক্ত পাম্প করে পুরো শরীরে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেলে আমরা তাকে হার্ট ফেইলিউর বলি।
কোনো রোগীর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সময় বা পরে যদি হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে হৃদযন্ত্রের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পায়, রক্ত শরীরে পরিমাণ মতো সরবরাহ করতে পারে না, ফলে রক্ত ফুসফুসে জমা হয়। এ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ রোগী যদি অনেকদিন চিকিৎসা নিয়মিত না করে এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখে অথবা হঠাৎ করে খুব দ্রুত রক্তচাপ অত্যাধিক বেড়ে গেলে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
রোগী যদি কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক হৃদরোগে ভোগে তবে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। রোগীর যদি হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে অনেক ব্লক থাকে এবং হৃদযন্ত্রের রক্ত সরবরাহ কম হওয়ার কারণে অক্সিজেন ও খাবারের ঘাটতি হয় তবে রোগীর হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
হার্ট ফেইলিউর রোগীর যেহেতু শরীরে পানি জমে, তাই পানি বের করার ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীর যেহেতু হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়, তাই কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়। তা ছাড়া রক্ত যেহেতু হৃদযন্ত্র থেকে কম পাম্প হয় তাই রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে। এ জমাট বাঁধা প্রতিরোধের জন্য রক্ত পাতলা করার ওষুধও দেওয়া হয়।
ওষুধ চিকিৎসার পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য এক ধরনের পেসমেকারের মতো দেখতে যন্ত্র যা সিআরটি নামে পরিচিত তা ব্যবহার করা যায় এবং এতে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা অনেক বাড়ে।
তা ছাড়া যেহেতু হার্ট ফেইলিউর রোগীদের হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত হৃদস্পন্দনে (Arrhythmia) হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে, তাই মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাসের জন্য ওষুধের পাশাপাশি CRT-D বা ICD নামক যন্ত্র হৃদযন্ত্রে বসানো হয়।
হার্ট ফেইলিউর রোগীরা সব ধরনের খাবার পরিমাণমতো খেতে পারে। তবে অতিরিক্ত লবণ, অতিরিক্ত পানীয় খাওয়া যাবে না। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মমতো খাবার খেতে হবে।
যেহেতু হার্ট ফেইলিউর রোগীদের শরীরের অতিরিক্ত পানি বের করার জন্য এক ধরনের মূত্র বর্ধক ওষুধ ব্যবহার করার কারণে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ইউরিক অ্যাসিড যাতে না বাড়ে এ জন্য গরুর এবং খাসির কলিজা, হাঁসের মাংস, মাছের ডিম ও অন্যান্য কিছু খাবার বাদ দিতে হবে।
হার্ট ফেইলিউর রোগীদের ভবিষ্যতে কিডনি সমস্যা, অন্ত্রের সমস্যা, মাথা ঘুরানো ও পড়ে যাওয়া, হঠাৎ মৃত্যুবরণ, হাত বা পা প্যারালাইসিস বা অবশ হওয়াসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
হার্ট ফেইলিউর ছাড়াও ফুসফুসে সমস্যা হলে, হার্ট আ্যটাক হলে, বুকে আঘাত পেলে, অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা করলে, ঘুম কম হলে, হাঁপানি হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।