ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক যুবককে অপহরণ করেছিল একটি চক্র। তবে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও কলেজ পড়ুয়া ছেলেটিকে জীবিত পাওয়া গেল না। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মো. মতিয়ার রহমানের ছেলে মো. সেজান আলী। সে এলাকার কথিত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আরেকজন গ্রেফতারকারীর নাম পরিচয় দেওয়া সম্ভব হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “অনেক দিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা স্বীকার করেছে যে তারা মিলনকে খুন করেছে এবং তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধারের কাজ চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার হওয়া সেজান আলীর বাড়ির পাশেই একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের নিচ থেকে মিলনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় আমরা দুইজনকে গ্রেফতার করি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে এবং তাদের দেখানো মতে আমরা স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে লাশ উদ্ধার করছি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।’
জানা গেছে, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজ পড়ুয়া মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পিছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টায় অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী পরিবারকে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানায়। প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়। পরদিন দুপুরে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি ৫ লাখ দাবি করে। পরদিন এটি বেড়ে ১০ লাখ হয়, এরপর তিনদিন পরে ১৫ লাখ এবং সবশেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। রোববার (৯ মার্চ) রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে পৌঁছানো হয় মিলনের পিতা পানজাব আলীর মাধ্যমে।
২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিলন হোসেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র এবং ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাওয়ের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে।
এদিকে, মিলনের পরিবার জমি-জায়গা বিক্রি ও ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা দিলেও ছেলেকে জীবিত না পেয়ে শোকের কাতর এবং পরিবারের সদস্যরা পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন।
মিলনের পরিবার জানিয়েছে, মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও ছেলেকে ফিরে পাননি তারা।
রবিবার (৯ মার্চ) রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেন মিলনের বাবা পানজাব আলী। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাও এর চাপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মিলনের পরিবার জানায়, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজ পড়ুয়া মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮ টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পিছনে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মিলন। এইদিন রাত ১ টার সময় মুঠো ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চায় তারা। পরদিন দুপুরে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। পরে চক্রটি ৫ লাখ দাবি করে। পরদিন আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিনদিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র।
মিলনের পরিবারের দাবি, অপহরণকারীরা যখন যত টাকাই চেয়েছে তা দিতে রাজি ছিলেন তারা। তবে বিভিন্ন সময় টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ঘটনাটি দীর্ঘ করেছে অপহরণকারীরা। সবশেষ ৯ মার্চ রাতে অপহরণকারীরা তাদের ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী ১০ টার ট্রেন উঠতে বলে। এরপর জেলার পীরগঞ্জের সেনুয়া নামক স্থানে চলন্ত ট্রেন থেকে ২৫ লাখ টাকার ব্যাগটি বাইরে ফেলে দিতে বলে। মিলনের জন্যে দুই সেট গায়ের পোশাকসহ ২৫ লাখ টাকা ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ১০ মিনিট পরে টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অপহরণকারী চক্র। এরপর দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে অপহৃত মিলনকে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয় অপহরণকারী চক্রটি। স্টেশনে গিয়ে সম্পূর্ণ স্টেশন তন্নতন্ন করে খোঁজাখুঁজি করা হয়। সেই রাতের ১১ টা থেকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ছেলে মিলনের দেখা পায়নি পরিবার।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমান বলেন, “অপহরণের ঘটনাটি ঘটার পরদিন মৌখিকভাবে পুলিশকে জানায় মিলনের পরিবার। তখন থেকেই চক্রটিকে ধরার জন্যে কাজ করছিলো পুলিশ। তবে তদন্ত কাজে মিলনের পরিবারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পায়নি পুলিশ। সবশেষ ৫ মার্চ ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে মিলনের বাবা পানজাব আলী। এর পর থেকে পুলিশের সাথে পানজাব আলী আর কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেনি। সেইসাথে অপহরণকারীদের সাথে ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি তারা পুলিশের কাছে গোপন রেখেছে।
জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর বিগবাজার এলাকা, অপহরণকারী সিজানের বাসার পাশ থেকে লাশ উদ্ধার।