শুধু তাই নয়, নিজের অর্থ ব্যয় করে নিজেই পরিচর্যা করে লাগানো গাছ সযত্নে বড় করে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মেঠোপথের বিভিন্ন রকমের গাছের চারা লাগিয়ে করেছেন শোভাবর্ধন।
এই বৃক্ষ প্রেমিক রঙ্গিলা রায়ের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামে। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল পৌর এলাকার থানা পাড়ায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। বৃক্ষ প্রেমিক রঙ্গিলা রায়কে সকলেই রঙ্গিলাবাবু বলেই চিনেন। তিনি ছয় হাজার টাকা বেতনে একটি এসিডের দোকানে সেলস ম্যান পদে চাকরি করেন। সেলস ম্যানের চাকরি করার কারণে তাকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছুটোছুটি করতে হয়। তার সামান্য বেতন থেকেই বৃক্ষ প্রেমিক রঙ্গিলা বাবু গাছের চারা কিনেন নিয়ে ছুটে যান শহর অথবা গ্রামের কোনো সড়কে। গাছের চারা লাগানোর পর তা ছাগল-গরুর হাত থেকে রক্ষা করতে নিজ খরচে বেড়া দেন।
গাছ প্রেমিক রঙ্গিলা রায় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হন বলে জানান। বিশেষ করে টাঙ্গাইল জেলায় গরমের সময় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং শীতে তাপমাত্রা অনেক কম। একটি গাছের মাধ্যমে মানুষ অনেক উপকৃত হয়। প্রচণ্ড গরমে গাছের ছায়ায় মানুষ প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারবে। পথিক গাছের ছায়ার নিচে বসে ক্লান্তি দূর করবে। ফলের গাছ থেকে মানুষ ফল খাবে এই রকম ভাবনা থেকেই গত ৭ বছর যাবত গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন রঙ্গিলা রায়। নিজের এলাকায় শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে জেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি সড়কে ও শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও কবরাস্থানেও বিভিন্ন জাতের গাছের চারা লাগাচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত শহর, গ্রামের সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ৩ হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রঙ্গিলা রায় আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের গাছের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া, বকুল, বট, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করেন। গত দুই/তিন বছর ধরে তার লাগানো অনেক গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।
স্থানীয় পৌর এলাকার কাজিপুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মাসুদুর রহমান জানান, গ্রামের যেসব সড়কে কোনো গাছ ছিল না, সেসব সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে ফলমূলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সে গ্রামের সড়কে দু’ধারে গাছ লাগিয়েছেন। ফল এসেছে। এসব গাছ গ্রামের লোকেরাও দেখাশোনা করছেন।
বেড়াবুচনা গ্রামের সমাজকর্মী আল আমিন বলেন, রঙ্গিলা বাবু সামান্য বেতনে চাকরি করে সেই টাকা থেকে গাছে চারা কিনে সরকারি জায়গায় লাগানো অনেক বড় মনের পরিচয়। অবসর সময়ে বা ছুটির দিনে অন্য কাজ করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজ খরচে রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনার সামনে গাছ লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। সত্যিই তিনি মহৎ কাজ করছেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, রঙ্গিলা বাবু সামান্য বেতনে সেলস ম্যান পদে চাকরি করে প্রকৃতির প্রতি অসীম ভালোবাসা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। পাশাপাশি তাকে দেখে নতুন প্রজন্ম বৃক্ষরোপণে উজ্জীবিত হলে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা পাবে।