বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: স্ত্রী শারমিন আক্তারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল মাসুদ হাওলাদারের। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলেও দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা ছিল না তাঁর কাছে। তাই স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে লঞ্চের কেবিনে হত্যা করে স্ত্রীর লাশ কেবিনে রেখে পালিয়ে যান তিনি।
আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে কক্সবাজার থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যা ব। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যা বের মিডিয়া সেন্টারে বিকেলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
১০ ডিসেম্বর সকালে বরিশাল নৌবন্দরে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী একটি লঞ্চের কেবিন থেকে শারমিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। পরে পরিবারের লোকজন তাঁর লাশ শনাক্ত করেন। র্যা ব ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছিল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যা বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, শারমিন ও মাসুদের বিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। মুঠোফোনের পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে শারমিনকে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না মাসুদ। ২০১৯ সালে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় তাঁকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন শারমিন। এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে ওই বছরের নভেম্বর শারমিনকে বিয়ে করেন মাসুদ।
বিয়ের পর এ দম্পতির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিয়ের পর তাঁরা একসঙ্গে থাকছিলেন না। মাসুদ থাকতেন আশুলিয়ায়। সেখানে এক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালাতেন। শারমিন তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায় চাচার বাসায় থেকে পোশাক কারখানায় চাকরি করছিলেন। মাসুদ শারমিনের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী ছিলেন না। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলেও দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হতো। এরই ধারাবাহিকতায় স্ত্রীকে মেরে ফেলার দুই সপ্তাহ আগে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
র্যা ব কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার পাঁচ দিন আগে শারমিন সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হন। অসুস্থতার সুযোগে কাশির সিরাপে বিষ মিশিয়ে তাঁকে পান করানোর পরিকল্পনা করেন মাসুদ। ঘটনার চার দিন আগে আশুলিয়া বাজার থেকে চেতনানাশক ও বিষ কেনেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের নথি জমা দিতে ঝালকাঠির নলছিটিতে যাচ্ছেন জানিয়ে শারমিনকে সঙ্গে নেওয়ার কথা জানান তিনি। কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে ৯ ডিসেম্বর শারমিন লঞ্চে করে মাসুদের সঙ্গে নলছিটির উদ্দেশে রওনা হন। রাতে লঞ্চের ভাড়া করা কেবিনে শারমিনকে ওষুধের সঙ্গে বিষ ও চেতনানাশক ওষুধ পান করান মাসুদ।
পরে শার্ট দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। লঞ্চ বরিশাল শহরের ঘাটে পৌঁছালে তিনি স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ থেকে বেরিয়ে নলছিটিতে যান।
র্যা ব জানায়, শারমিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মাসুদ আত্মগোপনে যান। তিন দিনে তিনি সাতটি জেলায় অবস্থান করেন। পরে আজ ভোরে কক্সবাজারের সুগন্ধা সমুদ্রসৈকত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।