বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধিনিষেধ এবং প্রচলিত নিয়ম তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা এ নিয়ম বাতিলের দাবিতে উপাচার্য বরাবর চিঠিও দিয়েছেন।
তবে এ জাতীয় আইন কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, একুশ শতকে এসে এ জাতীয় একটি বিষয় কথা বলতে হবে কেন? সিট একজন ছাত্রীর অধিকার। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। কেউ তাকে সেটি থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে সে বিবাহিত নাকি অন্তঃসত্ত্বা সেটি বিবেচ্য নয়।
জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির জানান, এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং অমানবিক। ছাত্রদের হলে তো এমন আইন নেই। একজন ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর কেন তাকে বিবাহিত বা অন্তঃসত্ত্বা বলে থাকতে দেওয়া হবে না। এ জাতীয় আইন কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, দেশের নারীরা নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে যদি এমন আইন কার্যকর থাকে সেটিও নারী অধিকার বঞ্চনাকে আরও সুস্পষ্ট করে দেয়। আমাদের বিষয়গুলো ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, একটা ছাত্রী বিবাহিত বা অবিবাহিত এর চেয়ে বেশি জরুরি সে ওটা পাওয়ার অধিকার রাখেন কিনা! যদি সিট পাওয়ার অধিকার রাখে তাকে সেটি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কেই সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুফিয়া কামাল হলের সাবেক নেত্রী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার বলেন, কোন ছাত্রী বিবাহিত হলে দেখতে হবে তার সুবিধা-অসুবিধার কথা। তার স্বামী দেশের বাইরে কিংবা ঢাকার বাইরে থাকলে তাকে অবশ্যই হলে থাকতে দিতে হবে। কারণ সে থাকবে কোথায়? আর এটা তো তার অধিকার।
তিনি আরও বলেন, তবে কেউ কেউ ঢাকায় স্বামীর সঙ্গেই থাকে। কিন্তু হলেও একটা সিট রেখে দেন। মাঝে মাঝে শুধু পরীক্ষা দিতে আসেন। তবে সেটা চাইলে একজন ক্লাসমেটের রুমে থেকেও সাময়িক কিছু দিনের কাজ সারানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে ভাবতে হবে আমাদের হলগুলোতে সিট সংকট কেমন। এসব বিষয় বিবেচনায় থাকা উচিত।
জানতে চাইলে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সাবেক নেত্রী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি খাদিজাতুল কুবরা বলেন, বিবাহিত হলেও যতদিন ওই ছাত্রী প্রতিষ্ঠিত না; এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে হলের থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে পরিবারের কাছাকাছি না নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে থাকা জরুরি। কারণ আমরা জ্বরে আক্রান্ত হলেও পরিবারের সান্নিধ্য খুঁজি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি কার্যক্রম আইনানুযায়ী চলে। সেটা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যেহেতু পূর্বে একটা আইন আছে। সেটা অনুযায়ী চলছে এখনো। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এটি পর্যালোচনার দাবি রাখে।
ছাত্রীদের হলে আসন বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালায় বলা আছে, কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।
সম্প্রতি শামসুন নাহার হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে বিবাহিত দুই ছাত্রীর সিট নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
ছাত্রীদের দাবিগুলো হলো- বিবাহিত মেয়েদের হলে থাকার বিষয়ে যে বিধিনিষেধ এবং তাদের জন্য যে প্রচলিত নিয়ম তা বাতিল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ বা ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট’ বা ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা। আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যে কোনো ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া।