বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুরে নববধূকে বাড়িতে উঠিয়ে আনার আগের দিন খুন হওয়া শরিফুল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানিয়েছেন মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শফিকুল ইসলাম (২৫), অফ্রিদি (১৯), মো. রাকিব হোসেন (২২), মো. রাজিব শেখ (২২), জুয়েল রানা (২৭) ও মো. হানিফ (২৭)। হত্যাকাণ্ডে দুজন দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত হানিফ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত শাজাহ উদ্দিনের ছেলে, অফ্রিদি বনখড়িয়া গ্রামের মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে, রাকিব একই জেলার জয়দেবপুর থানা এলাকার বাউপাড়া গ্রামের মো. নিয়ত আলীর ছেলে, রাজিব জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানা এলাকার দর্জিপাড়া গ্রামের মো. হাসানের ছেলে, জুয়েল ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার মিছিটেঙ্গী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে, ও শফিকুল নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার হিজুলিয়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে।
আসামি শফিকুল ইসলাম, মো. হানিফ ও আফ্রিদিকে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার বন খড়িয়া গ্রাম থেকে ও রাকিব হোসেন, রাজিব শেখ, মো. জুয়েল রানাকে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে গাজীপুরের ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আফ্রিদি ও শফিকুলকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে তারা নিজেদের জড়িয়ে ও অন্য আসামিদের জড়িত থাকার কথা জবানবন্দিতে বলেন। অপর আসামি রাকিব হোসেন, রাজিব শেখ, জুয়েল রানা ও হানিফকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার জানান, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (২০) গত ৯ ডিসেম্বর সকালে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ওই দিন বিকেলে বনখড়িয়া বাজার থেকে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট বিপসট গেট সড়কে চালকবিহীন অটোরিকশাটি দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে অটোরিকশার পেছনে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি মালিক মোশারফ হোসেনকে জানান রোমান হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
বিষয়টি মোশারফ হোসেন শরিফুলের বড় ভাই মো. সেকান্দারকে জানান। ওই দিন রাতে শরিফুল বাড়িতে না ফেরায় ১০ ডিসেম্বর সকালে গজারি বনের ভেতর থেকে তার গলাকাটা মরদেহ পায় স্বজনরা। পরে তারা পুলিশে খবর দেয়। ওই দিনই শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সেকান্দার।
মামলার পর শ্রীপুর থানা পুলিশ, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, নিহত শরিফুল ঘটনার ১২ দিন আগে জয়দেবপুর থানার এলাকার ভাওয়াল মির্জাপুর গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের মেয়ে কারিমাকে (১৭) পরিবারের অমতে গোপনে বিয়ে করেন। ১০ ডিসেম্বর কারিমাকে পারিবারিকভাবে অনুষ্ঠান করে শরিফুলের বাড়িতে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিমার বড় ভাই খোরশেদ আলমের শ্যালক রাজিব শেখ কারিমাকে পছন্দ করতেন। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া কারিমার বড় দুই বোনের স্বামী রাকিব হোসেন ও জুয়েল রানাসহ পরিবারের সদস্যরা কারিমা-শরিফুলের বিয়েতে রাজি ছিলেন না। পরে তারা শরিফুলকে হত্যার জন্য শরিফুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছমত ওরফে তারেককে এক লাখ টাকায় চুক্তি করেন।
চুক্তি মোতাবেক শরিফুলকে সিগারেট খাওয়ানোর কথা বলে আছমত বনখড়িয়া বাজার থেকে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট বিপসট গেট সড়কের মাঝামাঝি গজারি বনে নিয়ে যায়। সেখানে আছমত ও অন্য তিনজনসহ সিগারেট ও গাঁজা সেবন করার এক পর্যায়ে শরিফুলকে মাটিতে ফেলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।