বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ফেসবুক টাইমলাইনে অশ্লীল পোস্টের ছড়াছড়ি। জীবনযাপন ‘ভবঘুরে’ টাইপ, মাদক সেবন করেন নিয়মিত। তিনি ইচ্ছে হলেই পান করতে পারেন মদ-বিয়ার। আছে নারীদেহের প্রতি আকর্ষণ, অথচ টাকার অভাবে ভাত খেতে পারেন না, বাসা ভাড়া দিতে পারেন না।
‘দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাইরাল সেই আলমগীর কবিরকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া কতটা নিরাপদ তা জানতে চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন অনেকে। একাডেমিক নাম তার আলমগীর হোসেন হলেও ফেসবুকে তার প্রোফাইলের নাম আলমগীর কবির। নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞাপনেও আলমগীর কবির উল্লেখ আছে।
আলমগীরের বিজ্ঞাপনটি বগুড়া শহরের জহুরুলনগর এলাকায় বৈদ্যুতিক পোল ও দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়। পরে অনেকেই বিজ্ঞাপনটির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন। খুব দ্রুত এটি ভাইরাল হয়ে যায়।
আলমগীর বিজ্ঞাপনে লেখেন, তিনি প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্ক ছাড়া সব বিষয়েই পড়াতে পারবেন। সাদা কাগজে প্রিন্ট আউটে তার ফোন নম্বরও উল্লেখ আছে। এছাড়া সেখানে লেখা আছে বগুড়া জহুরুলনগরের আশেপাশে এলাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াতে (গৃহশিক্ষক) চান তিনি। সকাল ও দুপুরের ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চান তিনি।
আলমগীর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তিনি বগুড়া শহরের জহুরুলগর একতলা মসজিদ এলাকার পাশের একটি বাড়িতে বিনাভাড়ায় বসবাস করেন। ২০১৮ সালে তার মাস্টার্স শেষ হয়। পড়াশোনা শেষ হলেও তিন বছর ধরে বগুড়াতেই আছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩২ বছর বয়সী আলমগীর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সরাইল গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মো. কফিল উদ্দিন পেশায় পল্লী চিকিৎসক, মা আম্বিয়া বেগম গৃহিনী।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বগুড়ায় আলমগীর কি করে আমার জানা নেই। তার বাবার ৪০-৫০ শতক জমি রয়েছে। তারা পারিবারিকভাবে সচ্ছল নয়।
আলমগীরকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন বগুড়া শহরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক। তিনি বলেন, আলমগীর নারীর প্রতি খুব আকৃষ্ট। এছাড়া মাঝেমধ্যেই মদপান করে, ভবঘুরের মতো তার চলাচল। আলমগীরের ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া বিজ্ঞাপনটি ভুয়া। বগুড়ায় তার চেয়েও অসচ্ছল অনেক শিক্ষার্থী আছে, কিন্তু তারা কেউই আলমগীরের মতো বেপরোয়া-উশৃঙ্খল জীবনযাপন করে না।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নেতা মো. তৌহিদ হাসান বলেন, আলমগীরের ‘দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপনটি ঘিরে রহস্য আছে। সে কেন এমন বিজ্ঞাপন দিয়েছে তা পরিষ্কার না। তার ফেসবুকে অশ্লীল পোস্টের ছড়াছড়ি। এছাড়া তার জীবনযাপন কোনোভাবেই অসচ্ছল নয়।
একটি পোস্টে বিয়ায়া ক্যানের ছবি পোস্ট করেন আলমগীর। ক্যাপশনে লেখেন- বিন্দাস হয়ে নাচো রে, বিন্যাস হয়ে বাঁচো রে, অল ডে নাইট।
মূলা হাতে একটি ছবি পোস্ট করে আলমগীর ক্যাপশনে লেখেন- হাই বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই..? আমি এসে গেছি তোমাদের লেপ গরম করতে।
তার ‘দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপন ভাইরাল হওয়ার পর তিনি ফেসবুকের মাই ডে তে লেখেন- পড়াতে চাই লিখে পোস্টার লাগিয়েছি… এ পর্যন্ত চারটা মেয়ে ফোন দিয়ে সরাসরি বিয়ে করতে চেয়েছে, মানুষ এতটা মানবিক হয় কি করে???
এছাড়া শরীরের পোশাক খুলে অশ্লীল ভঙ্গিতে নিজের একটি ছবি আপলোড করেন আলমগীর। ক্যাপশনে লেখেন- কারো করোনার টিকা দেওয়ার ডেট ভুলে আমার কাছে এসো!
এসব বিষয়ে জানতে আলমগীরের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ার পর গত বুধবার দুপুরে আলমগীরকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কথা বলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেডের সুপারশপ স্বপ্ন’তে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট পদে চাকরি পাইয়ে দেন। বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আলমগীরের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বপ্ন’র পরিচালক শামসুদ্দোহা শিমুল এবং বগুড়ার এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, মদপান করা আর নারীর প্রতি আকৃষ্ট থাকার বিষয়টি আলমগীরের ব্যক্তিগত। তিনি নিয়োগপত্র পেয়েছেন, ২-৩ দিনের মধ্যে চাকরিতে যোগদান করবেন।