বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: দেশাত্মবোধক গান সারাবিশ্বেই জনপ্রিয়, স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে উঠে কখনও কখনও যেন জাতির গান হয়ে ওঠে। কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের গানের সঙ্গেও এরকম স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ভারতে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি এমন কিছু গান রয়েছে, যেগুলো স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বা কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামী বা নিহতদের স্মরণে গাওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’। অনেকেই হয়তো লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘মা তুঝে সালামের’ কথাও বলবেন। কিন্তু ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’ গানের সঙ্গে আমাদের মন খারাপের ইতিহাস জড়িয়ে গিয়েছে।
১৯৬২ সাল ভারত-চীন যুদ্ধ হয়। বেশ কয়েক জন ভারতীয় সেনা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিহত হন। এই যুদ্ধের দু’মাস পরে ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন এবং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে এই গানটি প্রথমবার নিহত সেনাদের স্মৃতির উদ্দেশে গেয়ে শোনান লতা মঙ্গেশকর। সেই থেকে আজ পর্যন্ত গানটি ভারতীয় জনসাধারণের দেশাত্মবোধকে একটি অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
এই গানটির রচনা নিয়ে ছোট্ট একটি ইতিহাস রয়েছে। রামচন্দ্র নারায়ণজি দ্বিবেদিকে সবাই কবি প্রদীপ নামেই জানেন। তিনি এই গানটি লিখেছিলেন নিহত সেনাদের স্মৃতির উদ্দেশে। সাবেক বোম্বাইয়ের মহিম সমুদ্রতটে হাঁটার সময় গানের কথা তার মাথায় আসে। একজনের থেকে কলম ধার নিয়ে সিগারেটের ফয়েলের প্যাকেটে প্রথম অনুচ্ছেদ লিখে ফেলেন তিনি। এবং তৈরি হয় ইতিহাস।
প্রথমে লতা মঙ্গেশকরের গানটি গাওয়ার কথা ছিল না। বরং তার বোন আশা ভোঁসলের গাওয়ার কথা ছিল। সুর নির্দেশক সি রামচন্দ্রের সঙ্গে কথা হওয়ার পর লতা মঙ্গেশকর রাজি হন। গানটি দুই বোন ডুয়েট করবেন ঠিক হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আশা ভোঁসলে সরে দাঁড়ান। গানটি একাই গান লতা মঙ্গেশকর। এভাবেই তৈরি হয় ইতিহাস।
এই গানটির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, কেউ কোনও পারিশ্রমিক নেননি। বরং সকলেই নিজেদের পারিশ্রমিক দান করেন নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের জন্য তৈরি ফান্ডে। ২০১৫ সালে বোম্বে হাইকোর্ট প্রখ্যাত মিউজিক কোম্পানি এইচএমভিকে নির্দেশ দেয় রয়্যালটি বাবদ সমস্ত অর্থ আর্মি রিলিফ ফান্ড এবং নিহতদের স্ত্রীদের জন্য তৈরি ফান্ডে জমা দিতে।
এত বছর পরেও এই গান একই রকম জনপ্রিয় সমস্ত ভারতবাসীর কাছে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস