বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : দল ছাড়ছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি রয়েছেন প্রভাবশালী এ নেতা। সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে রয়েছেন দারুন চাপে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সিনিয়র নেতাদের পরস্পরের প্রতি বৈরী মনোভাবের কারণে দলে আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারবেন না বলে মনে করেন আসলাম চৌধুরী। তাই তিনি বিএনপি’র রাজনীতি ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। তবে দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধার কারণে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন- দলীয় চেয়ারপারসন শেষ বয়সে কষ্ট পাবেন বলে।
উল্লেখ্য, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।
আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ওই নেতা জানান, কারাবন্দি থাকার সুযোগে দলের সুযোগসন্ধানীরা দখল করতে থাকে আসলাম চৌধুরীর সাজানো বাগান।
এরই মধ্যে বেহাত হয়ে গেছে তার নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি। এমনকি নতুন করে গঠন করা কমিটি থেকে আসলাম চৌধুরীর অনুসারী বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে বাদ দেয়া হয়। অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র তার মতামতকে অগ্রাহ্য করে। আন্দোলন, সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছিলো তাদেরকে কমিটিতে আনতে না পেরে তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ দল নিয়ে। কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছেন তাদেরও করা হয় অবমূল্যায়ন। তার নির্বাচিত এলাকা সীতাকুন্ডের বিভিন্ন কমিটির ক্ষেত্রেও তার মতামতকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়। আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকলেও তার মুক্তির বিষয়ে দলের নেতৃবৃন্দ জোরালো ভূমিকা রাখেনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কারাগার থেকে জামিনে বের হলেও ফের গ্রেপ্তার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থাকায় স্থবির গেছে তার ব্যবসা-বাণিজ্য। লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ প্রায় তার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার উপর রয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণের বোঝা। সম্প্রতি আসলাম চৌধুরীর মেয়ে মেহরীন আনহার উজমা ফেসবুকে হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস দিয়ে বাবার মুক্তির আকুতি জানিয়েছে।
সে স্ট্যাটাসে মেয়ে মেহরীন আনহার উজমা লিখেছে- ‘পাঁচটি বছর পরেও ফিরে পাইনি তোমাকে। বাবা, রাজনীতির প্রয়োজন নেই, আমাদের কাছে ফিরে এসো। তোমার প্রতীক্ষায় আমি। বাবা তুমি প্রয়োজনে রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর নাও। চূড়ান্ত অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত একান্ত তোমার বাবা। তবুও তুমি এ সময়ে আমার পাশে আমার কাছে ফিরে আসো। তোমাকে আমার আর মা’এর অনেক বেশী প্রয়োজন।‘ মেহরীন লিখেছে- ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় বারবার বাবাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমার জীবনের গড়ে ওঠার এ সময়টাতে বাবার সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে কি মনে হয়না ‘দু’হাজার আট দিন’ অনেক বেশী সময়, একজন নির্দোষ মানুষকে বন্দি করে রাখার জন্য? আমার মা’ও আমার ভবিষ্যত সহ বাবার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের সমস্ত পরিবার অস্থির অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। অন্যের সান্ত্বনা শুধু বাহ্যিক অশ্রুই মুছতে পারে ভেতরের ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের কান্না কেউ শুনতে পায়না। সারাক্ষণ অন্তর জুড়ে একটা হাহাকার বিরাজ করছে।‘ সে আরো লিখেছে- ‘বাবা আমার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন কোন অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদেশ্যে নয়। বরং বৃহত্তর পরিসরে মানুষের সেবা করার জন্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাবা আমার, দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রোকষ্ঠে দিনাতিপাত করে চলেছে বিনিময়ে অর্জন করেছে ঋণখেলাপির পদবী।….আমি আমার বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে। তাই আমাদের অঢেল অর্থ সম্পদের প্রয়োজন নেই। আমি চাই, স্বাভাবিক ব্যবসা-বানিজ্য করে এবং তাঁর মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেয়া হোক। বাবার এখন অনেক ব্যাংক ঋণ। বাবা বলতেন, আমি যদি ২/৩ বছর স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারি তাহলে আমার এ সমস্যা দূর হয়ে যেতো। সেজন্য আমার বাবাসহ আমরা চাই স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে আবার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। আমি বলবো, আমার বাবা যদি সুযোগ পায় অল্প সময়ের মধ্যে তার দৃঢ়চিত্ত এবং মেধার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সফল হবে।‘
আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজনীতি ছাড়ার বিষয়ে পরিবার থেকেও চাপে রয়েছেন তিনি । সব মিলিয়ে বিএনপি ছাড়ছেন আসলাম চৌধুরী।