বঙ্গনিউজবিডি রিপোর্ট : এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বাহারি নামের এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে ১৯৯৬ সালে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। সেই থেকে গত ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক। কখনো বৈধ কখনো অবৈধ আবার কখনোবা ভারপ্রাপ্ত ইত্যাকার বিবিধ সুরতে তিনি উপাচার্যের পদটি নিজ দখলে রেখে নিজের ইচ্ছা মোতাবেক পরিচালনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। নিজের ইচ্ছা মোতাবেক চালাতে গিয়ে জড়িয়েছেন বহু অনিয়ম অনৈতিকতায়। মজার বিষয় হলো যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন তখন শ্লোগান তুলেছিলেন, উচ্চ শিক্ষায় নৈতিকতার প্রশিক্ষণ। গত ২৬ বছরে তিনি শিক্ষার্থীদের কি নৈতিকতা শিখিয়েছেন আর নিজে কি নৈতিকতা অনুসরণ করেছেন তা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ মানুষ, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোকজন অবলীলায় প্রত্যক্ষ করেছেন। যার প্রতিফলন আমরা গণমাধ্যমকৃত তথ্য উপাত্ত বহুল ৩৫০-৪০০ সংখ্যক বিভিন্ন রিপোর্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
গণমাধ্যমের এসব রিপোর্টের কারণে তার যাবতীয় অবৈধ অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। ফলে মাওলানা সাদেক উপাচার্যের পদটি আর ধরে রাখতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে বিবিধ কলাকৌশল করে নিজের পছন্দ মোতাবেক একজন বৈধ উপাচার্য্য ও একজন বৈধ ট্রেজারার নিয়োগ করাতে সফল হলেন।
উপাচার্য্য হিসেবে নিয়োগ পেলেন অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী নাগরিক টুওমবা শহর নিবাসী প্রফেসর শাহজাহান খান। তিনি সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের স্ট্যাটিসটিক্স বিভাগের একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর নির্দেশনা মোতাবেক তিনি তার অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে লিয়েন ছুটি নেন্ নাই কিংবা চাকুরী পরিত্যাগ করে আসেন নাই। বাস্তবতা হলো তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতেই নিজ কর্মস্থলে রয়েছেন। যদিও উপাচার্যের চাকরি একটি পূর্ণকালীন চাকরি। প্রফেসর শাহজাহানের ফেসবুক (Shahjahan Khan, লোগো-নিজ ছবি) পোস্ট থেকে জানা যায় তিনি বর্তমানে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছেন এবং কাজটি যেন সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য সবার নিকট দোয়া প্রার্থনা করেছেন। নিজ ফেসবুক ওয়ালে তিনি দেখিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে ওয়ার্কড অর্থাৎ কর্মরত ছিলেন । আর বর্তমানে বসবাস করছেন (lives) টুওমবা শহরে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির হোমপেজে (https:// staffprofile.usq.edu.au/profile/shahjahan-khan) ঢুকলে দেখা যায় তিনি রীতিমতো সেখানে ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ায় রত আছেন। তিনি বর্তমানে সেখানে যেসব কোর্স নিচ্ছেন তাহলো : STA2300-Data Analysis, STA2301-Distribution Theory, STA2302-Statistical Interence, STA3301-Statistical Model। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার ফোন নাম্বার — +৬১৭৪৬৩১২২৮৫, ফ্রী কল- ১৮০০০০৭২৫২ । এই হলো অবস্থা। যার মানে হলো তিনি যাবতীয় তথ্য গোপন করে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আর একাজে তাকে পূর্ণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা সাদেক। জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রফেসর শাহজাহান খান মাওলানা সাদেকের সাথে একটি চুক্তি মোতাবেক বছরে দু-একবার বাংলাদেশে এসে শুধু মাত্র একাডেমিক সনদে স্বাক্ষর করে যাবেন। আর যদি আদৌ কখনো কনভেনশন হয় তাহলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। বর্তমানে তিনি এক বছরের বেতন ভাতা নিয়ে নিজ কর্মস্থল ও আবাসস্থল টুওমবা, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। যা তার বাংলাদেশস্থ চাকরির শর্তসমূহের সরকারি লংঘন। আমরা এতদবিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পেলেন প্রফেসর নূরুল ইসলাম। তিনিও মাঝেমধ্যে লন্ডন বেড়াতে চলে যান। ক্যাম্পাসে একটি কথা প্রায়শই শুনা যায়, তিনি মাওলানা সাদেকের কড়া নজরদারির কারণে সরকার প্রদত্ত নিজ দায়িত্ব পালনে হিমসিম খাচ্ছেন। তবে আশার কথা হলো, তিনি সব ধরনের লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রয়েছেন।