বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : শ্রীলংকানরা যখন অর্থের অভাবে নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন না তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনতে কয়েক হাজার কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। এ নিয়ে টুইটারেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
টুইটারে কেউ বলছেন, মাস্ক চাইলে একাই শ্রীলংকার সব ঋণ শোধ করার সামর্থ্য রাখেন। আবার কেউবা এটিকে দেখছেন পুঁজিবাদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে।
জানা গেছে, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের ৯ শতাংশ শেয়ার কিনে কিছুদিন আগে হইচই ফেলে দেন ইলন মাস্ক। এরপর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। প্রশ্ন উঠে ঠিক কী করতে চান টেসলা প্রধান?
অবশেষ জানা গেছে তার উদ্দেশ্য- পুরো টুইটারের মালিকানা পেতে সেটিকে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ এ ধনী।
গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, টুইটার কিনতে ৪ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করতে রাজি ইলন মাস্ক। অবশ্য অন্য মাধ্যমগুলোতে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কথা বলা হয়েছে। টুইটারের প্রতিটি শেয়ার ৫৪ দশমিক ২০ ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মাস্ক, যা সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টের গত ১ এপ্রিলের শেয়ার দরের তুলনায় অন্তত ৩৮ শতাংশ বেশি।
ইলন মাস্কের এ প্রস্তাবের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শ্রীলংকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কৌতুক করছেন, কেউ করছেন সমালোচনা।
স্ন্যাপডিল সিইও কুনাল বাহল টুইট করেছেন, ইলন মাস্ক টুইটার কিনতে চান ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে। শ্রীলংকার ঋণ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। তিনি দেশটি কিনে নিতে পারেন আর নিজেকে ‘সিলন মাস্ক’ বলতে পারেন (সিলন শ্রীলঙ্কার পূর্বনাম)।
টুইটার কেনার বদলে শ্রীলঙ্কাকে কিনে নিতে ইলন মাস্কের প্রতি অনুরোধ জানান মাসুদ জাহিদ নামে কলম্বোর এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, আপনি এর (টুইটার) বদলে শ্রীলংকা কিনতে পারেন? আমরা এ মুহূর্তে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে চালিয়ে নিতে পারব।
তবে কেউ কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে মোটেও খুশি নন। তাদের মতে, মাত্র একজন ব্যক্তি একটি দেশের সব ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাবান হওয়া সম্পদ পুঞ্জিভূতকরণের প্রমাণ এবং এটি মোটেও শুভ নয়।
সঞ্জয় নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ইলন মাস্ক টুইটার কিনতে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছেন। আর শ্রীলংকা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ পৃথিবীতে মৌলিকভাবেই কিছু সমস্যা রয়েছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট পার করছে। দেশটির চারদিকে চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলংকা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা নেই দেশটির কাছে। বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্র। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। চলতি বছর দেশটির প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি রয়েছে, যার মধ্যে জুলাই মাসেই রয়েছে ১০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের কিস্তি। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আপাতত সবধরনের বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটি।