বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় শ্বশুর বাড়ি থেকে চাহিদা মতো ঈদ খরচ না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শাকিল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
বুধবার সকালে ওই উপজেলার রণবীরবালা গ্রাম থেকে সাথীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাকিলকেও থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তার লাশ বিছানায় রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
মৃত গৃহবধূর নাম মীম আক্তার সাথী। ১৮ বছর বয়সী সাথী ওই উপজেলার কাফুরা পূর্বপাড়া গ্রামের মজিবর রহমান মজনুর মেয়ে। তার স্বামী শাকিল একই উপজেলার রণবীরবালা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। ২৩ বছর বয়সী শাকিল পেশায় ট্রাকচালক।
জানা গেছে, বছরখানেক আগে সাথী ও শাকিল বিয়ে করেন। এর আগে তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ উঠেছে, তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই থাকত। যৌতুকের টাকার জন্য সাথীকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতেন শাকিল। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে সাথীকে বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন শাকিল।
কিন্তু সাথীর পরিবার অস্বচ্ছল হওয়ায় এত টাকা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বিষয়টি নিয়ে সাথী ও শাকিলের মধ্য মনোমালিন্য হয়। কোনো উপায় না পেয়ে সাথীর বাবা শাকিলকে ৫ হাজার টাকা পাঠায়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে সাথীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় শাকিল। একপর্যায়ে সাথীকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে শাকিলের পরিবার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কালাম আজাদ জানান, সাথী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে সকালে তাকে মুঠোফোনে জানানো হয়। তবে তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে গিয়ে সাথীর শয়ন ঘরের বিছানায় তার লাশ শায়িত অবস্থায় দেখা যায়। বিষয়টি রহস্যজনক। আত্মহত্যা নাকি খুন বলা যাচ্ছে না।
সাথীর স্বজনরা জানান, মাঝে মাঝেই টাকার জন্য সাথীকে মারধর করতেন শাকিল। এমনকি নির্যাতনের শিকার হয়ে সপ্তাহখানেক আগে সাথী তার বাবার বাড়িতে যান। গত ৩ দিন আগে সাথী স্বামীর বাড়িতে আসেন। এবার তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো তার শ্বশুরবাড়িতে।
শাকিলের চাচি রণবীরবালা গ্রামের বাসিন্দা ফেন্সি খাতুন জানান, সাথীকে হত্যা করা হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছে এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। সকালে স্থানীয়দের শোরগোল শুনে শাকিলের বাড়িতে গিয়ে সাথীর লাশ বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় দেখা যায়।
সাথীর বাবা দিনমজুর মজিবর রহমান মজনু বলেন, অনেক কষ্ট করে টাকা সংগ্রহ করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। জামাই (শাকিল) মাঝে মধ্যেই যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিত। এবার ঈদ উপলক্ষে জামাই ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। দুইদিন আগে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তাদের চাহিদা মতো টাকা না পাওয়ায় ওরা আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। মৃতের স্বামী শাকিলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, সাথীর গলায় আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।