বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ। সোমবার সকাল থেকে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে এই টেস্ট। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নয় রান করে আউট হন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক।
এদিন, অবশ্য বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সব ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ হয়েছেন, তবে মুমিনুল হককে আলাদাভাবে চোখে পড়ছে, যিনি চট্টগ্রামের মতো ব্যাটিং স্বর্গেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এবার ঢাকাতেও দলের বিপদ বাড়িয়ে দিয়ে তিনি উইকেট দিয়ে এলেন।
বাংলাদেশের টপ অর্ডারে মাহমুদুল হাসান জয়, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান কোনও রান যোগ না করেই ফিরে গেছেন।
সোমবার আসিথা ফার্নান্দোর যে বলে মুমিনুল হক আউট হলেন, ব্যাটের অবস্থান দেখে মনে হয়েছে মুমিনুল খেলবেন কি না সেটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না।
বাংলাদেশের ক্রিকেট মেন্টর ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেন, “মুমিনুলের আউট হওয়া বা রান না পাওয়ার চেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় তার সিদ্ধান্তহীনতা। তাকে কোনওভাবেই নির্ভার লাগছে না। মনে হচ্ছে তিনি নিশ্চিত না কী করতে চান তিনি।”
মুমিনুলের মাঠের খেলার ব্যাখ্যা যাই থাকুক পরিসংখ্যান এখন তার বিরুদ্ধেই কথা বলছে।
মুমিনুল হক গত ১৪ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন।
সর্বশেষ চৌদ্দ ইনিংসে মাত্র তিনবার দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছেন মুমিনুল হক – ইনিংসপ্রতি রান দেখুন: ৬, ০, ১, ৭, ৮৮, ১৩*, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২ এবং ৯।
একবারই তিনি অর্ধশতক পার করতে পেরেছেন।
অথচ তিনি এখন টেস্ট দলের অধিনায়ক এবং এমন এক জায়গায় ব্যাট করতে নামেন যেখানে দায়িত্ব নিয়ে না খেললে গোটা দলের ওপরই পাল্টা চাপ পড়ে।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, অধিনায়কত্ব একটা চাপ বটে। এটা থাকবেই। টেস্টে বাংলাদেশ এতো অধারাবাহিক একটা দল যে অধিনায়কের মাথায় ব্যাপারটা থাকে।
বিশেষত বারবার পরাজিত দলের অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা এবং একই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ায় মুমিনুল হককে অপ্রস্তত হতে হয়েছে।
মুমিনুল চেষ্টা করেন বাস্তবতা মেনে উত্তর দিতে।
কিন্তু তার ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স তাকে আরও বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় যার পুরো দায়ভার একান্তই তার।
অর্থাৎ অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার পাশাপাশি টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে যে একটা সুনাম ছিল সেটাও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে- এই বিষয়টা মুমিনুল হককে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে মুমিনুল হকের রান ছিল ৩৬ ম্যাচে ২৬১৩। একচল্লিশ গড়ে এই রান তুলেছিলেন তিনি।
টানা অর্ধশতকের রেকর্ডসহ ১৩টি ফিফটি এবং ৮টি শতক ছিল সেই সময়ে।
অধিনায়কত্ব পাওয়ার পরে ১৭ ম্যাচে গড় নেমে হয়েছে ৩২।
দুইটি অর্ধশতক ও দুইটি শতক মোটে তিনি করেছেন অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর।
এটা সত্যি যে দলে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ এবং আগে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটার থাকার পরেও তাদের অনীহার কারণেই মুমিনুল হককে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে এবং তিনি যে চাপে থাকেন সংবাদ সম্মেলনে কখনও কখনও তা ফুটে ওঠে।
এই যেমন শেষ টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সবাই সেঞ্চুরি করলে তো ১১০০ রান হয়ে যাবে।”
ব্যাটিং নিয়ে তিনি চিন্তিত নন, এই কথাটাও বেশ চিন্তা করেই বলতে হলো।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে সে এটা উদ্বেগজনক। যারা কোচ আছেন তাদের নজরে পড়া উচিৎ সাহায্যটা ঠিক কোথায় দরকার।
তিনি বলেন, বিদেশে ভালো করেনি ঠিক কিন্তু মুমিনুল যে ভালো ব্যাটসম্যান এটা নিয়ে সন্দেহ নেই।
সোমবারের ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার বোলাররা এভাবে কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করবে এটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বুঝেই ওঠেনি।
“প্রস্তুত ছিল না ব্যাটসম্যানরা। টেস্ট ক্রিকেটে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত হয়ে মাঠে যেতে হবে। একটা নতুন দিন নতুন করে শুরু করতে হতো। কিন্তু দুভার্গ্যজনক সেটা হয়নি।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সোমবার প্রথম ইনিংস ব্যাট করতে নেমে মধ্যাহ্নবিরতির আগেই পাঁচটি উইকেট হারিয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা