বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মামলায় দুই আইনজীবীকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এর প্রতিবাদে আদালতের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ আইনজীবীরা।
এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশের ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। এতে আদালতে বিচারকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও (সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত) বিচারকদের গাড়ি সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত দুই আইনজীবীসহ ৫ জনের তিন দিনের রিমান্ড আদেশ দেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত ডেইরী, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিএমএম আদালত ভবনের সামনে রাস্তার দুই দিকের ফটক বন্ধ করে কয়েকশ আইনজীবী বিক্ষোভ করে ওই দুই আইনজীবীর মুক্তি দাবি করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতা, ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য বিচারকরা কয়েক দফায় বৈঠকে বসেন।
ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, বৈঠকে রিমান্ডের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয় এবং মৌখিকভাবে দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে না নিয়ে জেলহাজতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া আগামী রোববার এই দুই আইনজীবীর রিমান্ড বিষয়ে শুনানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু বিক্ষোভস্থলে এসে সাধারণ আইনজীবীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বৈঠকের কথা তুলে ধরে বলেন, নিশাত ভুইয়া আমাদের বোন। তার স্বামী আমাদের বোন জামাই। তার ভাই আমাদের ভাই।তাদের রিমান্ডের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা ফলো করা হবে। আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করব। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত আইনজীবীরা তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন এবং ওই আইনজীবীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
জামিন পাওয়া আইনজীবী নিশাত ভুইয়া বলেন, আমার স্বামী ও ভাইকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুরের সময় আমরা পুলিশ হেফাজতে ছিলাম। যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের গ্রেফতার না করে, যারা আমাদের পানীয় ও খাবার দিতে গেছে তাদের আটক করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের একজন ব্যারিস্টার শিমুল বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ওই আইনজীবীদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ঘটনার সময় তারা পুলিশ হেফাজতে ছিল। তাহলে তারা কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা করল।
প্রসঙ্গত, জুরাইনে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকা সত্ত্বেও উল্টোপথে মোটরসাইকেলযোগে আসছিলেন রনি ও নিশান। এ সময় সার্জেন্ট মো. আলী তাদের গতিরোধ করে কাগজপত্র চাইলে তার ওপর চড়াও হয় মোটরসাইকেল আরোহীরা। এ সময় তারা আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে পুলিশের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।পরবর্তীতে নিশান তার ছোটভাই ইয়াসিনকে ফোন করে লোকজনসহ আসতে বলেন।
এদিকে খবর পেয়ে ইয়াসিন সাড়ে ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলীর ওপর এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে রক্তাক্ত জখম করে। পাশাপাশি হামলাকারীরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করে। ঘটনাস্থলে আসা কদমতলী থানার এসআই উৎপল দত্ত অপু মারধরের শিকার হন। বর্তমানে সার্জেন্ট মো. আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর এসআই উৎপল দত্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে সাড়ে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা প্রদান, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।