বঙ্গনিউজবিডি রিপোর্ট : এশিয়ান ইউনিভার্সিটির মালিক মাওলানা আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক-এর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অন্ত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির গত ২৬ বছরের ইতিহাসে মাওলানা সাদেকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এসব অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আর্থিক বিষয়াবলী মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নেওয়া যায় নাই। বিষয়টি সত্যি রহস্যময়। মাওলানা সাদেকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ইতিপূর্বে উত্থাপিত হয়েছে : (১) যুদ্ধাপরাধ : ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) টেলিভিশনে ‘জীবনের আলো’ নামক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী প্রচার প্রপাগাণ্ডা চালানো। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিতা মাওলানা খালেক ও ভ্রাতা ইঞ্জিঃ ফারুকসহ অস্ত্র হাতে সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করা। অবশ্য পরবর্তীতে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নরসিংদী আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেনের নিকট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক মর্মে একটি সনদ ক্রয় করে মাওলানা সাদেক।
নরসিংদির পীরপুরে তাদের বাড়িটির মূল মালিক অক্ষয় কুমার রায় নামক জৈনিক হিন্দু লোকের। জনশ্রুতি রয়েছে যে মাওলানা সাদেক পরিবার হয়তো লোকটিকে মেরে ফেলেছে নতুবা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাকে কোলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছে। (২) অর্থ পাচার : মাওলানা সাদেক, তার স্ত্রী সালেহা সাদেক এবং পুত্র জাফর সাদেক পরস্পরের যোগসাজশে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে মর্মে যাবতীয় তথ্য ইউজিসি’র নিকট রয়েছে মর্মে তথ্য এই প্রতিবেদক জানতে পেরেছেন। তাছাড়া মাওলানা পরিবারের রয়েছে দেশব্যাপী ১০০ বিঘার উপর জমি এবং ২৫০ টির মতো ফ্ল্যাট। যার তথ্য প্রমাণ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের নিকট রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। (৩) জাল সার্টিফিকেট বিক্রি : গত ২৬ বছরে মাওলানা সাদেক ও তার পরিবার কমপক্ষে ৭ লক্ষ একাডেমিক সার্টিফিকেট বিক্রি/বিতরণ করেছে মর্মে তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ মারফত জানা গেছে। (৪) অনৈতিক কর্মকান্ড : মাওলানা সাদেকের সামনে থেকে তার প্রতিষ্ঠানে কোন মহিলা অক্ষত অবস্থায় যেতে পারে নাই। সাহিদা,রীতা,মমতাজ,আয়েশা, রাবেয়া,দীনা সহ অনেকেই তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আনাস সাদেক এবং সুমাইয়া সাদেক নামক তার ২ জন অবৈধ সন্তান রয়েছে। তারা উত্তরা এলাকায় বসবাস করছে। (৫) চাকুরেদের উপর নির্যাতন : তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকুরেদের অতি-স্বল্প বেতন ভাতা দিয়ে মাওলানা সাদেক বিকৃত আনন্দ উপভোগ করে থাকে। তাছাড়া যখন যাকে ইচ্ছা চাকুরিচ্যুত করে মুক্ত হস্তে বিদায় করা তার একটি বিকৃত মানসিকতা।
সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল, ২০২১ ইউজিসি কর্তৃক ইস্যুকৃত পত্র নং ৩৭.০১.০০০০.১৩১.৪১.০০৫.২০.১০১ মারফত ঘোষণা করা হয় যে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে জন্মলগ্ন থেকে বৈধ কোন উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার ছিল না এবং ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বৈধ কোন উপাচার্য ছিল না। এই সময়ে মাওলানা সাদেক কর্তৃক যাবতীয় আর্থিক লেনদেন ও যাবতীয় দলীল দস্তাবেজে স্বাক্ষর প্রদান আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে উত্থাপিত যাবতীয় অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়া ছাড়াও জঙ্গি কানেকশনের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসি। এবং এই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করা হয় উক্ত পত্র মারফত।
কিন্তু অতিব আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক ইস্যুকৃত পত্র সূত্র নং দুদক/বি:অনু: ও তদন্ত-১/১৮০-২০১০/৩৫৪৯৯/১(৭); তারিখ : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ মারফত মাওলানা সাদেককে বৈধ উপাচার্য জ্ঞান পূর্বক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে ক্লিন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মনে করছেন, দুদক যদি অন্তত ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে মাওলানা সাদেক কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন ও যাবতীয় দলীল দস্তাবেজে স্বাক্ষর প্রদান পর্যালোচনা করতো তাহলে নিশ্চিত ভাবে তার জাল-জালিয়াতির যথেষ্ট প্রমাণ পেয়ে যেতো। তা করা হয় নাই। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাওলানা সাদেক যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত বৈধ উপাচার্য ছিল না বিষয়টি তদন্তকারি দুদক কর্মকর্তার নিকট বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মনে করছেন, দুদক যদি পূনরায় বিষয়টি তদন্ত করে তাহলে দেশের একজন কুখ্যাত অপরাধির শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যা করা অপরিহার্য।
এখানে উল্লেখ্য যে, মাওলানা সাদেকের আপন চাচাতো ভাই মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, নরসিংদীর চেয়ারম্যান মঞ্জুরে এলাহি কর্তৃক দুদক চেয়ারম্যান বরাবর মাওলানা সাদেককৃত বিবিধ আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অপরাধের তদন্ত কামনা করে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালে তদন্তটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
একজন আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের আইনে তথ্য গোপন করে দায়মুক্তি দেওয়া নেওয়া ২টিই গুরুতর অপরাধ।