বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র হুবহু ‘কোরআনুল কারিম’ অর্থাৎ যেমনটি কোরআনুল কারিম একটি কিতাব, তদ্রƒপ প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন বাস্তব জীবন্ত কিতাব। কেননা তিনি আল্লাহর নাজিলকৃত সব বিধান তাঁর বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সব আদেশ ও নিষেধ সর্বাধিক সন্তুষ্টির সঙ্গে অন্তঃকরণে ভালোবেসে গ্রহণ করেছিলেন। তাই আল কোরআন ও রহমাতুল্লিল আলামিনের জীবনচরিত এক ও অভিন্ন। তাই তো আল্লাহ ঘোষণা করলেন, যে রসুলকে অনুসরণ করল সে মূলত আল্লাহকেই অনুসরণ করল। এরপর আল্লাহ তাঁর হাবিবকে কোরআনের মডেল ও অনুকরণীয় করে গোটা বিশ্ববাসীর মুক্তি ও নাজাতের জন্য শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ এ বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তাঁরই আনুগত্য, ইতায়াত, অনুসরণ ও অনুকরণ। সঙ্গে এ বিশ্বাসও, একমাত্র তাঁর আনুগত্য ও অনুকরণের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি, মুক্তি ও হেদায়েত পাওয়া সম্ভব। এর ভিন্ন কোনো পথ অবলম্বনকারীকে পথভ্রষ্ট বিবেচিত করা হবে। এমনকি সব রকমের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে সব মানুষের, সব মতের ঊর্ধ্বে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা, আদেশ-নিষেধ ও আদর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণ করাই হলো ইসলাম। আর এটিই হলো আল্লাহর অভিপ্রায়। তাই তো আল্লাহ ঘোষণা করলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের হুকুম মান্য কর, যদি ইমানদার হয়ে থাকো। সুরা আনফাল, আয়াত ১। একজন মোমিন পূর্ণাঙ্গভাবে আল্লাহর রসুলকে অনুসরণের মাধ্যমে মূলত আল্লাহকেই অনুসরণ করল। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি রসুলের হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল, আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল আমি আপনাকে তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। সুরা নিসা, আয়াত ৮০। পাশাপাশি প্রতিটি মোমিনকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয় সব বিধিবিধান ও নেতৃবৃন্দের বৈধ বিষয়ে আনুগত্য করাও জরুরি। তবে এসব ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ ও রসুল তথা কোরআন ও হাদিস বিরোধী, ইসলামবিরোধী কোনো বিষয় নির্ধারণ হলে, যা একজন মোমিনের পক্ষে ইমান, আমল ও আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশনার দিকেই ফিরে যেতে হবে। এবং সেখান থেকেই তার সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে নিতে হবে। এবং কোরআন- সুন্নাহর আলোকে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশের মালিক তাদের, তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাকো। সুরা নিসা, আয়াত ৫৯। কর্মে ও বর্জনে তাঁর সুন্নত বা জীবনাদর্শই প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। এবং এতেই রয়েছে দুনিয়াবি শান্তি, পরকালীন মুক্তি ও নাজাত। রব্বুল আলামিন বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য। সুরা আহজাব, আয়াত ২১। আল্লাহ আরও বলেন, হে নবী! আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তবে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু। বলুন আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য প্রকাশ কর, বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না। সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১-৩২। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করে তারাই মূলত আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসবে সে অবশ্যই আমার সঙ্গে জান্নাতে প্রতিবেশী হবে। আল হাদিস। সুতরাং নবীর প্রতিটি সুন্নতকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে অনুসরণ না করে, শুধু মুখে মুখে নবীকে ভালোবাসা, তাঁর কষ্টের কথা স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জন, জশনে জুলুশ করে আশেকে রসুল দাবি করার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। প্রিয় নবীর ভালোবাসায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি, অথচ নবীর প্রিয় সুন্নত মুখে দাড়ি নেই, গায়ে সুন্নতি লেবাস নেই, নিজের বিবি-কন্যা পর্দায় নেই, হারাম-হালালের বাছবিচার নেই, নিজের ঘরে নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার নেই, বিচারকার্যে ইনসাফ নেই, ভাই বোনের হক বণ্টনে ন্যায্যতা নেই, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের দীনি শিক্ষায় গুরুত্ব নেই, প্রতিবেশী, এতিম, গরিব, মিসকিন ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ নেই, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার চেষ্টা নেই, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মানসিকতা নেই, অথচ আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সবকিছুই আমরা আল্লাহ ও রসুলের দুশমনদের কৃষ্টি-কালচার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি। একজন মুসলিম নারী-পুরুষকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে সত্যিকারের মুসলিম।
লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা