বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : পরেশ চন্দ্র ১৯৯৪ সালে মারা গেছেন। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের পাঁচুইল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ক্ষেতলাল শাখা থেকে তার নামে ১০ হাজার টাকা এমসিডি ঋণ পরিশোধের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ডাকযোগে পাঠানো ব্যাংকের রেজিস্ট্রি করা চিঠিটি মৃত পরেশ চন্দ্রের বড় ছেলে নরেশ চন্দ্র গ্রহণ করেন। চিঠি খুলে তিনি তার বাবার নামে ব্যাংকের ১০ হাজার টাকার এমসিডি ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেখতে পান।
নরেশ চন্দ্র জানান, নোটিশে দেখে ভেবেছিলেন, তার বাবা জীবিত থাকতে হয়তো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তবে এতদিন পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেওয়ায় তার মনে খটকা লাগে। পরে চিঠির নিচের অংশে গিয়ে দেখেন, ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর তার বাবা ঋণ গ্রহণ করেছেন! অথচ তার বাবা পরেশ চন্দ্র ২৮ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন মারা গেছেন।
এমন অদ্ভুত চিঠি পেয়ে নরেশ সোনালী ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখায় গেলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা নথিপত্র ঘেঁটে জানান, ঋণ গ্রহণের তারিখ ঠিক আছে। এ সময় নরেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বলেন, তার বাবা ২৮ বছর আগে মারা গেছেন। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, ঋণের নথিতে পরেশ চন্দ্রের নাগরিকত্ব সনদ, ছবি, জমির কাগজপত্র ও স্বাক্ষর-সবই আছে।
আলমপুর ইউপিতে ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যু রেজিস্ট্রার খোলা হয়। ওই রেজিস্ট্রারের ৩৮ নম্বর পাতার ৪৩ নম্বর সিরিয়ালে পাঁচুইল গ্রামের পরেশ চন্দ্রের নাম রয়েছে। তার মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বুকের ব্যথার কথা উল্লেখ রয়েছে। আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০২১ সালের ৯ মার্চ নরেশ চন্দ্রকে তার বাবার মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়েছে। ওই সনদেও মৃত্যুর তারিখ ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন উল্লেখ করা হয়েছে।
নরেশ চন্দ্র বলেন, ১০ হাজার টাকা বড় কথা নয়। আমার বাবা মৃত্যুর ১১ বছর পর কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণ গ্রহণ করলেন, তাতে আমরা আশ্চর্য হয়েছি। মৃত্যুর পর আমার বাবা জীবিত হয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন, সেটা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছাড়া আর অন্য কেউ দেখেননি। এর আগে আমরা কখনও বাবার নামে থাকা ঋণ পরিশোধের নোটিশ পাইনি।
আলমপুর ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার জানান, পাঁচুইল গ্রামের পরেশ চন্দ্রের মৃত্যুর তারিখ ইউপি কার্যালয়ের মৃত্যু রেজিস্ট্রারেই উল্লেখ রয়েছে। ইউপি কার্যালয় থেকে পরেশ চন্দ্রের মৃত্যুর সনদও দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার ব্যবস্থাপক সিনিয়র প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব বলেন, ব্যাংকের ঋণ নথিতে দেখা গেছে, পরেশ চন্দ্র ২০০৫ সালে কাগজপত্র ও স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ঋণটি পরিশোধ হয়নি। এখন ঋণটি শ্রেণিকৃত হয়েছে। এ কারণে ঋণের আসল টাকা পরিশোধের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত ব্যক্তি কীভাবে ঋণ পেলেন জানতে চাইলে এই প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা বলেন, তখন আমি এখানে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলাম না। এ কারণে সেটি আমার জানার কথাও নয়। তবে একসময় এ শাখায় কৃষি, এমসিডি ও ছাগল ঋণে অনিয়ম হয়েছিল বলে শুনেছি।