বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ইরানের রাজধানী তেহরানে পুরস্কার নেওয়ার সময় পারমিদা ঘাসেমি নামের এক তীরন্দাজের হিজাব খুলে পড়া ও বাকি সময় হিজাবহীন থাকার ভিডিও নিয়ে নেট দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরপরই নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
১৬ সেপ্টেম্বর হিজাব না পরার অভিযোগে আটক মাশা আমিনির মৃত্যু নিয়ে ইরানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। তার মধ্যেই ঘাসেমির এমন আচরণকে হিজাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন হিসেবে দেখছেন অনেকে।
যদিও পরবর্তীকালে হিজাব পরে ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে পারমিদা বলেন, আসলে বাতাসের কারণে আমার হিজাবটি পড়ে গিয়েছিল, যা সেসময় খেয়াল করিনি। এমন ঘটনায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। সত্যি বলতে, হিজাব নিয়ে আমার ও আমার পরিবারের কোনো সমস্যা নেই।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, পুরস্কার মঞ্চে অন্য বিজেতাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পারমিদার মাথা থেকে হিজাব খুলে পড়ছে। সেটি ঠিক করার কোনো চেষ্টা করছেন না তিনি। এমনকি, পাশের এক খেলোয়াড় হিজাব ঠিক করে দিতে গেলে মাথা সরিয়ে নেন পারমিদা। এর পরপরই উপস্থিত দর্শকদের অনেকে তাকে উদ্দেশ্য করে বাহবা ও হাত তালি দিতে থাকেন।
এদিকে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তেহরানে চীন-ইরানের মধ্যকার বাস্কেটবল ম্যাচে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত থাকেন ইরানি খেলোয়াড়রা।
এ সপ্তাহের প্রথম দিকেই থাইল্যান্ডে আয়োজিত এশিয়ান ওয়াটার পোলো চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত থাকে ইরান দল। দুবাইয়ে আবুধাবির বিপক্ষে ম্যাচে একই কাজ করে ইরানের ন্যাশনাল বিচ ফুটবল দলও।
অন্যদিকে ১৬ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আয়োজিত আইএফএসসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হিজাব ছাড়া অংশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন ইরানি রক ক্লাইম্বার এলনাজ রেকাবি। যদিও পারমিদার মতো পরবর্তীকালে তিনিও ভুলবশত এমনটি করেছেন বলে দাবি করেন ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বুধবার (৯ নভেম্বর) ইরানের উপ-ক্রীড়া মন্ত্রী মরিয়াম কাজেমিপুর বলেন, ইরানের কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ ইসলামিক নিয়মের বিরোধিতা করার সাহস দেখিয়েছেন। যদিও পরে তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ইরান কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই হিজাব আইন নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজার হাজার ইরানি নাগরিক। বিশেষ করে ইরানি তরুণীরা এর ঘোর বিরোধিতা করে আসছেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রথম দেশটির নাগরিকরা রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবাদ গড়ে তুলেছেন।