উল্লেখ্য যে, গত ২২শে মার্চ বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে এক বিচারক তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেদিন স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে স্কুলের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দফায় দফায় প্রতিবাদ জানিয়েছে স্কুলশিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে সেদিন শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে একপর্যায়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে গত সোমবার বিচারকের মেয়ে তার ফেসবুক স্টোরি তে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট দেয়। এতে কয়েকজন সহপাঠী ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেদের ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। পরদিন সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন তিন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবককে শিক্ষকের মাধ্যমে ডেকে আনেন। ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে ‘অপমানজনক কথা’ বলা হয়েছে এমন দাবি করে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন তিনি। শিক্ষার্থীরা বক্তব্য অনুযায়ী, সেসব অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে মামলার হুমকি দেওয়ার একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর অবিভাবকদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন ওই বিচারক।
আরও জানা যায়, সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রাবেয়া খাতুন সেই বিচারকের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসান। তাই বিচারকের মেয়ের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রাবেয়া খাতুন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাড়িয়ে বলছে। ফেসবুক পোস্টে বিচারকের মেয়ে তাদের অপমান করার বিষয়ে তারা আমাকে কিছুই জানায়নি। আর সাংবাদিকদের দেখে মেয়েরা বাড়িয়ে বলছে।’ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,‘সব মেয়েই আমার কাছে সমান। পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন।
এরপর বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সবকিছু শুনে তিনি বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন।
সর্বশেষ রাত ৮টায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘একজন অভিভাবক আরেকজন অভিভাবককে মাফ চাওয়াতে পারেন না। আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে এই ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছি। এখানে একটা বাচ্চাকে বা অভিভাবককে যদি কেউ অপমান করে সেটা আমারও অপমান। আমার মেয়েও এই স্কুলে পড়ে। আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের যথাযথ বিচার পাইয়ে দেব।’
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের জানান।
তিনি সেদিন বলেন, ‘যদি কখনো শিক্ষক কোনো অন্যায় করেন তাহলে আমরা তার বিচার করব। দরকার হলে মোবাইল কোর্টের মধ্যে সেই শিক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তোমরা রাইট পজিশনেই আছো। বিচারক যে আচরণ করেছেন সেটার বিচার করবেন জেলা জজ। সেটা তিনি আমাকে বলেছেন। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় জেনে গেছে। সেই বিচারকের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা জজ আমাকে জানিয়েছেন।’
এরই প্রেক্ষিতে আজকের এই সিদ্ধান্ত বলে জানা যায়।