বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর আয়োজিত এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী।
তিনি বলেন,মেধাসম্পদ বিষয়ে দেশের খুব কম মানুষই জানে। আগে আমি নিজেও জানতাম না মেধাসম্পদ কী। জেনেছি মন্ত্রী হয়ে। এতেই বোঝা যায়, দেশের মানুষ মেধাসম্পদ নিয়ে আসলে কী জানে।
নকল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে নকলের প্রবণতা অনেক বেশি। সব কিছুই নকল হয়। পণ্যের পাশাপাশি গান-কবিতা পর্যন্ত নকল হয়ে যাচ্ছে।’
মেধাসম্পদ নিয়ে কাজ করা গবেষকদের জন্য একটি ফান্ডের ব্যবস্থা করা হবেও জানান নূরুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমাণু ও পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গবেষণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বরিশালের সফেদা বা নরসিংদীর সাগর কলা বা লটকনের মতো অনেক ফল আছে যেগুলো জিআই পণ্য হওয়ার যোগ্য। এছাড়া দেশের ছোট ছোট সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। একবারে আহামরি কিছু করে ফেলতে হবে এমন কিছু না।’
এর আগে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে সাম্প্রতিক সময়ে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৭টি পণ্যের সনদ দেয়া হয়। নিবন্ধন পাওয়া সাতটি জিআই পণ্যের সনদ সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নতুন ৭টি পণ্যকে জিআই সনদ দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতল পাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম ও নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২২, বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২৩ প্রনয়ণ করা হয়েছে এবং ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে ইলিশ, জামদানি, রংপুরের শতরঞ্জজিসহ ১৭টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হবে, এদেশে বৈদশিক বিনিয়োগ তত বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতার প্রকাশই মেধাসম্পদ আর এই উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। জাতি হিসেবে আমরা যত বেশি জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগাব, তত বেশি সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হতে পারবো। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি, এই উন্নয়নশীলতা ধরে রাখতে না পারলে আমরা আবার পিছিয়ে যাব।’
এতে টেকসই উন্নয়ন ও ধারাবাহিক অগ্রগতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিতে হবে ও মানব কল্যাণের জন্য সৃষ্ট উদ্ভাবনকে সহজলভ্যভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আর শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, মেধাসম্পদ নিয়ে সচেতন হতে হবে। মেধাসম্পদ নিয়ে সচেতন না হলে প্যারাসিটামলের দাম হবে ২ হাজার টাকা। কারণ বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পেটেন্ট ফ্রি পায়। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন শেষ হলে এই পেটেন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে না।
আগামী পাঁচ বছরকে সামনে রেখে ওষুধের এই পেটেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে শিল্প সচিব বলেন, ‘শুধু ফ্রি পেটেন্ট নিয়ে ওষুধ তৈরি করলে হবে না। এর পাশপাশি গবেষণায়ও মনোযোগ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেধাসম্পদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন এবং চর্চা করেন। বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখতে চাইলে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে।’
নতুন পণ্য আবিষ্কারের ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরে জাকিয়া সুলতানা বলেন, পুরুষদের আবিষ্কার নিয়ে আমরা যা জানি, নারীদের অবদান ও আবিষ্কার নিয়ে আমরা তা ঠিক জানি না। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারীদের অবদানকেই তুলে ধরা হয়েছে।
শিল্প সচিব বলেন, ‘মেধাসম্পদ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে নয়, পরিপালনের মাধ্যমে এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ২০২৬ সালে এলডিসির আগে মেধাসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে। নাহলে বাংলাদেশকে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমাকর্স অধিদফতরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।