বঙ্গনিউজবিডি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :করোনাভাইরাসের (কোবিড-১৯) কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবসর সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মোবাইলে গেমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির হাত ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরাইল উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে মোবাইলে ইন্টারনেট চলে গেছে। আর সেই সুবাদে স্থানীয় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা পাবজি, তিনপাত্তি, ফ্রি-ফায়ার ও বিভিন্ন গেমসে ঝুঁকে পড়ছে।
উপজেলার উঠতি বয়সের যুবকদেও লক্ষনীয় ভাবে দেখা যায়। সন্ধ্যা হলেই আড্ডার আসরটা জমে ওঠে। সহপাঠীদের সাথে গেমস খেলার পাল্লা দিতেই পিতার আর্থিক অবস্থান বিবেচনা না করেই কোমলমতি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থী ও তরুণরা মোবাইল কিনে নেওয়ার জন্য বায়না দিচ্ছে। এতে মোবাইল না পেলে অভিমানে পথ পর্যন্ত বেঁচে নিচ্ছে তরুণরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা ও যুব সমাজ দিন দিন পাবজি, তিনপাত্তি, ফ্রি-ফায়ার সহ বিভিন্ন নামক গেম খেলছে।যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা শিক্ষা, বই পাঠ, ও খেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে, সে সময়ে তারা প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরকুনো হয়ে এসব নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে আছে। ১০ বছর থেকে ২৫ বছর বয়সী এসব শিশু, কিশোর ও তরুণরা প্রতিনিয়ত স্মার্ট ফোন দিয়ে গেমে আসক্ত হচ্ছে। এসব গেম থেকে শিক্ষার্থী বা তরুণ প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রিফায়ার গেমে আসক্ত নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান, প্রথমে তার কাছে ফ্রি ফায়ার গেম ভালো লাগত না। কিছু দিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন তিনি আসক্ত হয়ে গেছেন। এখন গেমস না খেললে তার অসস্তিকর মনে হয়।মাঝে মধ্যে গেমস খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার ইচ্ছাও হয় তার। এসব গেমস যে একবার খেলবে, সে আর ছাড়তে পারবে না বলে দাবি করে ওই শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে এক স্কুল শিক্ষার্থীর পিতার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, করোনায় স্কুল কলেজের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আসক্ত হচ্ছে এ খেলায়। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রি-ফায়ার নামক গেম নিয়ে ব্যস্ত। যা শিক্ষার্থীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার ছেলেও এই গেমে আসক্ত হয়েছিল। পরে টের পেয়ে তার ছেলের হাত থেকে এন্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে ওয়্যারড্রপে তালা দিয়ে রেখেছে।এখন তার ছেলে সাধারণ ফোন ব্যাবহার করে।
এসব গেমস এর আসক্ত সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্সইউনিটির উপদেষ্টা ও উচালিয়াপাড়া বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদ উদ্দিন ঠাকুর শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে নিষিদ্ধ করা হোক অনলাইনের গেমস গুলো। অন্যথায় ছাত্র সমাজ ও যুব সমাজের ভবিষ্যত সফলতা হুমকির মুখে পড়বে।তিনি মনে করেন এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি কাম্য।
সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন আমাদের সময় আমরা অবসর সময়টা,বইপড়া,সংস্কৃতি চর্চা ও বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার যুগে এ প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার গ্রামগঞ্জে মোবাইলে গ্রুপ গেম মহামারি আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীরা অনেকে পড়ার টেবিল ছেড়ে গেমস খেলতে মগ্ন।এতে একদিকে তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্য ঝুঁকিতে পড়ছে, অন্যদিকে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পাড়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের জেলা-উপজেলা এমনকি প্রত্যেকটি ইউনিয়নে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটাকে যেন অপব্যবহার করতে না পারে অভিভাবকদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে ।
উপজেলা উপজেলা চেয়ারম্যান আরো বলেন বলেন করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এ মরণঘাতী করুনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন এর পাশাপাশি কারফিউ দিতে বাধ্য হন একটি রাষ্ট্রের সুবিধার্থে তেমনি কোমলমতি শিশুদের যাতে আক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার ঝুকিমুক্ত রাখার জন্য সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক জড়িয়ে পড়েন এ ব্যাপারে আমাদের জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে তেমনি ভাবে অভিভাবকদেরকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে স্টুডেন্টদের জন্য বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এই ক্লাসের সুজুকে যাতে অন্য দিকে মনোযোগী না হয় সেদিকে অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
বিনোদনের জন্য কিছু সময় খেলাধূলা করা মন্দ নয় কিন্তু সেটাতে যদি আসক্ত হয়ে যায় এবং এতে খারাপ প্রভাব পড়ে তখন সেটা থেকে অবশ্যই তরুণ যুবকদের দূরে রাখতে হবে। তিনি বলেন বর্তমানে এ ফ্রি-ফায়ার নামক গেমে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এর খেলার পেছনে সময় অপচয় করছেন।অভিভাবকসহ সমাজের সবাই মিলে এ বিষয়ে তদারকি না করলে ভবিষতে ফ্রি ফায়ার নামক গেম মাদকের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাই এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান ।
এদিকে ইতিপূর্বে মোবাইল গেমের আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি এই প্রথমবারের মতো এটাকে একটা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলো। যেটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোগব্যাধির শ্রেণি বিন্যাসের তালিকায় ‘গেইমিং রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।