বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: অভিশপ্ত শয়তান মানুষকে সবসময় তার রবের পথ থেকে সরিয়ে বিপথগামী করার পায়তারা খুঁজে। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে মানুষ নিজের ওপর জুলুম করে ফেলে, পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং কুমন্ত্রণার ফাঁদে পড়ে গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাওয়া মানুষের স্বভাবজাত।
পাপের প্রতি মানুষের এই আগ্রহ সৃষ্টিগত। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে। (বুখারি, খণ্ড ৭, ২৪৫৫)
মানুষ পাপে জড়িয়ে গেলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করার জন্য তওবার পথ খোলা রেখেছেন। তবে শর্ত হলো, গুনাহের পর সেটি গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম সম্পাদন করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।’ (সূরা আনআম, আয়াত, ৫৪)
এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম, ২৭৪৮)
হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, মানুষের স্বভাবজাত দুর্বলতার কারণে, মানুষের মাধ্যমে পাপ সংঘটিত হয়ে যেতে পারে, তবে পাপে জড়িত হওয়ার পর এ থেকে ফিরে না আসা এবং তওবা না করা ও অন্যের কাছে পাপের কথা প্রকাশ করার বিষয়টি ভয়াবহ।
এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন আর ভোর হওয়া মাত্রই আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল।’ (বুখারি, হাদিস, ৬০৬৯)
আরেক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি মদিনা থেকে দূরবর্তী এক স্থানে এক মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং আমাকে আমার প্রাপ্য শাস্তি দিন।’ তখন ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আল্লাহ তো তোমার পাপ গোপন রেখেছিলেন, তবে কেন তুমি তা গোপন রাখলে না?’ (সহিহ মুসলিম)
হাদিসের ঘোষণা থেকে এ কথা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছায় কোনো গুনাহ করে বসে আর তা গোপন রাখে; তাহলে আল্লাহ তায়ালাও ওই ব্যক্তির পাপ কাজ গোপন রাখেন। এরপর মানুষটি তওবা করলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কারণ, পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَا یُحِبُّ اللّٰهُ الۡجَهۡرَ بِالسُّوۡٓءِ مِنَ الۡقَوۡلِ اِلَّا مَنۡ ظُلِمَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ سَمِیۡعًا عَلِیۡمًا
খারাপ কথার প্রচার প্রপাগান্ডা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে (তার কথা আলাদা), আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা, আয়াত, ১৪৮)