বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : টিকটক, লাইকি ও পাবজি সামাজিক বিষফোঁড়া ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি।
‘মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটক- সমাজের তিন ব্যাধি রোধ করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি। শনিবার দৈনিক যুগান্তর কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী।
বৈঠকের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, একটি পরিবারের সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে সেই পরিবারে যে অশান্তি নেমে আসে তা বর্ণনাতীত। কিশোর গ্যাংয়ের আদ্যোপান্ত নিয়ে গত কয়েক দিনে যুগান্তরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো যা বলছে, তাতে আমি মনে করি কিশোর গ্যাং ও টিকটক ভিডিওর বিষয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আরও তৎপর হতে হবে। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চয়ই যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে তাদের কাজকে জনগণের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।
কোমলমতিদের এসব অপরাধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার বিষয়ে সালমা ইসলাম বলেন, করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ছেলে-মেয়েরা স্বাভাবিক রুটিনমাফিক চলছে না। তারা রাত জাগছে, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটে বেশি সময় দিচ্ছে। সন্তান কার সঙ্গে সময় কাটায়, মোবাইল ফোন-ল্যাপটপে কী করে- সেটি মনিটরিং করতে হবে। সন্তান নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মায়ের। এ সময়টিতে অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, তাদের বেসিক শিক্ষা চালু রাখতে হবে।
কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বিষয়ে সালমা ইসলাম বলেন, যুগান্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী- কিশোর গ্যাংগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে তাদের কথিত বড়ভাই। যাদের মাফিয়া বলা হচ্ছে। সবার আগে এ চক্রগুলোর মাফিয়াদের খুঁজে বের করতে হবে। আমি মনে করি, কিশোররা এসব গ্যাংয়ে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য প্রথমত পরিবারই দায়ী। দ্বিতীয় অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি, এদের কেউ কেউ গ্রেফতার হলে যারা তাদের ছাড়িয়ে আনতে যান তারাও সমান অপরাধী। এজন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
টিকটক, লাইকির বিষয়ে সালমা ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে টিকটক ডিজিটাল অপরাধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকে টিকটকের পক্ষে সাফাই গাইবেন। এর ভালো দিকগুলো তুলে ধরবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসা খবরে যা জেনেছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি, এই টিকটক দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। টিকটকে ভালো কিছু করার সুযোগ নেই। টিকটকের মতো আরেকটি মরণনেশা আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে; সেটি হচ্ছে- ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম। ছেলেমেয়েরা নেশার মতো এসব গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এসব গেম কোমলমতিদের মারপিট, দাঙ্গা-সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ করছে। তাছাড়া অনলাইনে খেলতে গিয়ে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে তারা। এতে খুব দ্রুত সবার অজান্তেই একটি খারাপ নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়ছে সন্তানরা। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি অনুরোধ করব, টিকটক, পাবজির মতো যেসব গেম, অ্যাপস আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে তা দ্রুত বন্ধ করুন বা নিয়ন্ত্রণে নিন। করোনা মহামারিতে এসব গেম সামাজিক বিষফোঁড়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব বিষয়ে কম্প্রমাইস করা উচিত হবে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যুগান্তর মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটকের দৌরাত্ম্য রোধে সুপারিশ করছে।