বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক:ফেসবুক, ইউটিউবসহ নেট দুনিয়ায় ইসলাম প্রচার করার মাধ্যমেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন আবু ত্ব-হা আদনান। এই ইসলামিক বক্তা হঠাৎই গত ১০ জুন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। নিখোঁজ হওয়ার সময় তার সঙ্গে গাড়িচালকসহ আরও তিনজন সহকর্মী ছিলেন। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর তরুণ ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের সন্ধান মিলেছে। তিনি রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কোতোয়ালি থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ জানান, শুক্রবার দুপুরে তিনি রংপুর নগরীর কলেজ রোডে তার প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়িতে আসেন। পরে তাকে থানায় পুলিশ হেফাজতে আনা হয়। থানা থেকে পরে আদনানকে রংপুরের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
তরুণ এই ইসলামী বক্তার নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তোড়পাড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার সন্ধান চেয়ে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছে তার ভক্ত সমর্থকরা। তবে কে এই তরুণ ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান?
তার নাম, মো. আফছানুল আদনান কিন্তু সবার কাছে তিনি আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নামেই সবার কাছে পরিচিত। ৩১ বছর বয়সী এই তরুণ বক্তার বাড়ি রাজশাহী হলেও তিনি রংপুর জেলায় নানা বাড়িতে বড় হয়েছেন। ত্ব-হা ছিলেন একজন ক্রিকেটার। তবে গত কয়েক বছরে ধর্মে ঝুঁকে পড়েন। আর খেলাধুলা ছেড়ে এক পর্যায়ে ইসলামের নানা দিক নিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। ২০১৮ সালে আলোকিত জ্ঞানী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আর্প হয়েছিলেন তিনি।
ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় মাসের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন।
আর ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারা। তিনি ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামি গার্লস মাদ্রাসার পরিচালক ও শিক্ষক। তিন মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। নিখোঁজ ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার।
ত্ব-হা আদনান নগরীর সুরভী উদ্যানের বিপরীতে প্রজন্ম নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেটির প্রধান সে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা দেয়া হতো ওই স্কুলে। করোনার কারণে স্কুলটি দেড় বছর ধরে বন্ধ।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। দর্শন বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়েন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আহলে হাদিস সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রংপুরের জামিয়া সালাফিয়া মাদ্রাসার ১০-১২ জন ওস্তাদের কাছ থেকে অ্যারোবিক গ্রামারসহ দ্বীনি বিষয়ে তালিম নিয়েছেন। ইসলামী বই প্রচুর পড়তেন। নিজের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে ধর্মীয় আলোচনা করতেন। বিভিন্ন মসজিদে নামাজও পড়াতেন তিনি।
তোহা নিজেকে ইসলামী স্কলার দাবি করেন। তিনি উঠতি একজন ইসলামী আলোচক, যিনি সুস্পষ্ট কথা বলার ভংগিমার কারণে তরুণদের মধ্যে দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হন। পড়াশোনা শেষ না হলেও তিনি ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের মতো করে ব্যাখা দিয়ে যাচ্ছেন অনেকদিন ধরেই, যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা এবং সমালোচনা দুটোই হতো। সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত তার বক্তব্যে ঢাকা শহরকে ‘কেয়ামতের শহর’ হিসাবে উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিনি। দাবি করেছেন, ‘যে নারী পুরুষের সঙ্গে পাবলিক বাসে উঠে অফিসে যায়, যে নারী সহকর্মী পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তারা দাজ্জালের বাহিনীর সদস্য। ইমাম মাহাদীর বিরুদ্ধে এই নারীরাই যুদ্ধ করবে।’
ইসলাম ধর্মমতে দুনিয়া ধ্বংস তথা কিয়ামতের আগে মুসলিমদের সঙ্গে দাজ্জালের বাহিনীর লড়াই হবে। আর মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন ইমাম মাহাদী। ইমাম মাহাদী পৃথিবীতে কবে আসবেন, এ নিয়ে অবশ্য ইসলামিক বক্তাদের মধ্যে বিরোধ আছে। কেউ কেউ নিজেকে ইমাম মাহাদী পরিচয়ও দিয়েছেন নানা সময়।
ত্ব-হার দাবি, পরকালে দোজখে নারীদের সংখ্যা বেশি হবে। আর এর জন্য তার ভাষায় ‘নারীর উদ্ধত’ আচরণ দায়ী। প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও তোহা নানা সময় উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, আদনান আহলে হাদিস মতাদর্শের অনুসারী, তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ও অনলাইনে ইসলাম ধর্ম নিয়ে নানা বিষয়ে বক্তব্য দিতেন। যা নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। তার প্রতিপক্ষ ইসলামিক মতাদর্শের অনুসারীরা এ সব বিষয় ভাল ভাবে মেনে নিতেন না। এমনকি তার দেয়া বক্তব্য (ফেসবুক ও ইউটিউব) বিশ্লেষণ করছে পুলিশ।
গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হন। এছাড়াও তার সঙ্গে নিখোঁজ হন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন। তবে কোথা থেকে কীভাবে নিখোঁজ হন এমন তথ্য দিতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।