বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: মাত্র এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান। ধান বিক্রি করে কৃষক পেল পাঁচ লাখ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও এমনটি ঘটেছে কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পল্লী গ্রামের কৃষক মিলনের পরিশ্রমের ফসল। তার এই সাফল্যে এলাকায় চমক সৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে মিলনের এই নতুন ধানের বীজ সংগ্রহ করতে আশপাশের জেলার কৃষকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মিলনের বাড়িতে। কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মিলনের ধানের ফলনে বেজায় খুশি হয়ে এই ধান সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেছে। কৃষক মিলন উচ্চফলনশীল
কৃষক পরিবারের ছেলে মিলনের বাড়ি মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামে। পেশায় একজন মুদি দোকানি হলে নিজের জমিতে চাষাবাদ ও বাড়িতে গরু পালন করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনে পরিবারে। আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ।
মিলন বলেন, তিন বছর আগে আমি ব্রি-৫১ জাতের ধান চাষ করি। সে সময় আমার ধানের জমিতে এক গোছা ধানের গাছ দেখা যায় অস্বাভাবিক।
অন্য গাছের তুলনায় গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা এবং মোটা। আমি গাছগুলোকে তুলে না ফেলে অন্য ধানের সাথে রেখে দেই। পরে দেখি ওই ধান গাছের শীষে অনেকগুলো ধান। আমি সেই গোছার ধানগুলোকে আলাদা করে কেটে রেখে দিলাম। পরে সেই ধানগুলো আলাদা করে চারা দিয়ে অল্প কিছু জমিতে চাষ করি। এর পরের বছর ওই ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পুনরায় দেড় বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করি। নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুমারখালী, গাংনী, পাবনাসহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক এই ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। এ ধানের জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে মিলন জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি।
আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বড়। গাছের বয়স ১০০-১১০ দিন। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭০০ থেকে ৭৫০ টা করে ধান হয়। যা সাধারণ ধানের তুলনায় ছয় গুণ। যার ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম। এ ছাড়া চিকন চাল হয় এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু। ধানের নামকরণ সম্পর্কে তিনি জানান, যেহেতু এই ধানের কোনো নাম নেই তাই আমি আমার মেয়ের নাম অনুসারে এ ধানের নাম রেখেছি ‘ফাতেমা ধান’। তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমি ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে ধান বিক্রি করেছি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে ১৫০-১৬০টি করে ধান থাকে। কিন্তু কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত ধানের প্রতিটি শীষে ৭০০-৭৫০টি করে দানা হয়েছে। ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৪০-৫০ মণ হতে পারে। ঝিনাইদহের হরিধানের মতো এই ধানটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা রাখি।