বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ঘরে-বাইরে অসহ্য গরম, বাতাসে যেন আগুনের হলকা। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা কমার কোনো সুখবর নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৈশাখের শুরুর থেকেই গ্রীষ্মের রুদ্ররূপ দেখছে রাজধানীসহ সারা দেশ। অতি প্রয়োজনে যারা সড়কে নামছেন তাদের ভোগান্তিও অন্তহীন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, এপ্রিল জুড়েই তাপমাত্রা ওঠা-নামা করবে ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় গরম অনুভূত হবে এর চেয়েও বেশি। এসময় কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলে মিলবে সাময়িক স্বস্তি। তবে দাবদাহ থেকে যাবে মে মাস পর্যন্ত।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, হিট অ্যালার্ট তিনদিনের জন্য জারি করা হয়েছে। এই সময় সবাইকে গরম থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকতে হবে। তবে সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি থাকলেও কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
টানা চারদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গতকাল পর্যন্ত এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
শুক্রবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আজ পর্যন্ত ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত ১৬ এপ্রিলও ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া যশোরে ৪১ দশমিক ২, বাগেরহাট, পাবনা ও রাজশাহীতে ৪১, খুলনায় ৪০ দশমিক ৭, কুষ্টিয়ায় ৪০ দশমিক ২, সাতক্ষীরা টাঙ্গাইলে ৪০, গোপালগঞ্জে ৩৯ দশমিক ৭, ফরিদপুরে ৩৯ দশমিক ২, মাদারীপুরে ৩৮ দশমিক ২, সিরাজগঞ্জে ৩৭ দশমিক ৯, বরিশালে ৩৮ দশমিক ২, বগুড়ায় ৩৭ দশমিক ৬, পটুয়াখালীতে ৩৭ দশমিক ২, নওগাঁয় ৩৭, ভোলায় ৩৬ দশমিক ৫, চাঁদপুরে ৩৬ দশমিক ৬ এবং কিশোরগঞ্জের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ এবং ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ।
সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এসময়ে রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুক্রবার রাত ১টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা: উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।