আসলাম ইকবাল : কুশলী শিল্পী, ভালো একজন বাদনদারের বাজনা ও সুর প্রত্যেকটি দর্শকের মন বিমোহিত করে দেয়। সেই রকম একজন তবলা বাদন শিল্পী ও কন্ঠশিল্পী পশ্চিমবঙ্গের কুশলী শিল্পী চন্দ্রশেখর হালদার। তার স্থায়ী নিবাস জয়নগর, মজিলপুর দক্ষিন ২৪ পরগনা। তিনি ছোট বয়সে পড়াশুনা করেছেন মজিলপুর জে.এম. ট্রেনিং. স্কুলে। কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে বি.এস.সি. পাশ করেন। মেডিকেল বিষয়েও ডি.এম.আর.টি (রেডিওলজি) বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। তার পিতা স্বর্গীয় ডাঃ এন.কে. হালদার, মাতার নাম মীরা হালদার, ৮৬ বছরের মাও তাকে সঙ্গীতে অনুপ্রেরনা দিয়ে থাকেন।
চন্দ্র শেখর ছোটবেলা থেকেই ১৯৮০ সালের কথা, তবলা শিক্ষা শুরু করেন। তার ওস্তাদ প্রয়াত শ্রী তারা সংকর চক্রবর্তী মহাসয়ের কাছে তবলা শিখেন। পরবর্তীতে পন্ডিত কানাইলাল ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছে দীর্ঘদিন তালিমরত। আজ পর্যন্ত তার সঙ্গীতে তবলার পরিক্রমা ৪৪ বছর চলমান। তবলার পাশাপাশি জনৈক রবীন্দ্র সঙ্গীত গুরু অধ্যাপক অগ্নীভ বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে; কলকাতার এই গুনী গুরুর কাছে প্রায় ১০ বছর শিক্ষা নিয়েছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার লালন শাহ-র আকড়ায় ও নাটোরে এসেছিলেন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে ঢাকায় আসেন, আমার সাথে কথা হয় ঢাকার আরেক তবলা বাদক শিল্পী জাহাঙ্গীর মির্জার অফিসে বসে। তার সহযোগিতায় চন্দ্র শেখরের সাথে দীর্ঘক্ষন আলাপচারিতা। ছবি তুলেছেন মোস্তাফিজ মিন্টু, তিনি আমাকে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর মির্জার মহাখালিস্থ অফিসে।
কুষ্টিয়ার লালন আকড়ায় শিল্পী হাবিবুর রহমানের সাথে চন্দ্রশেখর তবলায় সঙ্গত করেন। তারপর ‘সপ্তবর্না’ শিল্পী গোষ্ঠির আমন্ত্রণে তিনি নাটোরে আসেন। একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদেন, সেখানে ভূয়সি প্রসংশা পান। চন্দ্র শেখর একজন পিয়ানো শিল্পীও। তিনি পিয়ানো শিক্ষা গ্রহন করেছেন বিখ্যাত পিয়ানিষ্ট প্রসেনজিৎ চৌধুরীর কাছে। লন্ডনের এ.বি.আর.এস.এম. ইনষ্টিটিউট থেকে ডিগ্রীও লাভ করেছেন চন্দ্রশেখর। পেশা জীবনে কলকতার বিভিন্ন মঞ্চে সম্মানের সহিত অংশ গ্রহণ করেছেন। যেমনঃ নজরুল মঞ্চ, উত্তম মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন এবং আরো নামিদামি মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশনে অংশ নেন। পশ্চিমবঙ্গ দুরদর্শন টিভিতে তিনি স্বর্ণযুগের গানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
চন্দ্রশেখরের পরিচালনায় তবলা বাদনে শিক্ষার উপর ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। চ্যানেলের নামঃ ‘চন্দ্র শেখর হালদার’। করোনা অতিমরির শেষ প্রান্তে এসে শিল্পীর মনে জাগে বেশ কিছু প্রতিভাবান মানুষের যারা দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন, তাদের জন্য কিছু করে যাওয়ার। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তবলা শিক্ষার টিউটোরিয়াল একটি চ্যানেল করবেন। পরবর্তীতে তিনি যথারীতি একটি চ্যানেল খুলেন। সেখানে প্রচুর শিক্ষানুরাগী খুব যত্ন করে তবলা শিক্ষা শুরু করেন। তার সেখানো পদ্ধতি ছাত্র-ছাত্রীদের এতোই মনোগ্রাহী হয় যে, দিনে দিনে ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে তার চ্যানেলের সাসক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারের উপরে। তিনি বলেন-তার এই চ্যানেলের আরো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিলো। উদ্দেশের মধ্যে প্রতিভাবান ছাত্ররা (কলকাতা ও বাংলাদেশের) সঙ্গীত গুরুদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় তবলার বোলবানী সঠিক ভাবে না পাওয়ার জন্য তাদের শিক্ষা লাভ যেন অনেক পিছিয়ে যায়। যা তারা হয়তো অনেক আগেই তাদের লাভ করতে পারতো। এই অসৎ উদ্দেশ্যকে ভেঙ্গে চুরমার করতে তিনি এই তবলা শিক্ষার চ্যানেলটি বানিয়েছেন। যার ফল সরূপ তার শিক্ষা দানের ধরন সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং সকল ছাত্র-ছাত্রীরা অনায়াসেই অনেক মূল্যবান বোলবানী সহজেই রপ্ত করতে পারছেন তার চ্যানেল থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার অগনিত ছাত্র-ছাত্রী অনলাইনে তার কাছে তবলার তালিম নিচ্ছেন। তবলার পাশে হাওয়াইন গিটার বদ্দনেও সিদ্ধহস্ত।
ঢাকার তবলা বাদক জাহাঙ্গীর মির্জার অনুরোধে নাটোরের পর্ব শেষে তিনি ঢাকায় আসেন। গত ১৮ মে মহাখালিস্থতে ঢাকার বেতার টিভির শিল্পীদের আয়োজনে এক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। সেখানে জাহাঙ্গীর মির্জার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কলকাতার চন্দ্রশেখর হালদারকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে যন্ত্র সঙ্গীত শিল্পীরাও অংশ গ্রহন করেছেন। সবাই তার তবলা বাদনের ভূয়সী প্রসংসা করেছেন। অনুষ্ঠানে তবলা সঙ্গীত একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। কলকাতার ১টি নামী সরকারী স্কুলে ‘লি. কলিন্স হাই স্কুলে’ দীর্ঘ ১০ বছর যাবত সম্মানের সহিত শিক্ষাকতা করেছেন।
চন্দ্র শেখরের বড় ভাই, দাদা ভাইয়ের নাম হিমাদ্রী শেখর হালদারের কাছে তবলা শিক্ষার অনুপ্রেরনা পেয়েছেন। তার স্ত্রীর নাম স্বাতী হালদার (রোজারিও) একজন সঙ্গীত প্রেমী। তিনিও অনুপ্রেরনা দেন, তার অনুপ্রেরনা ছাড়া কোন ভাবে এতদুর আসা সম্ভব হতো না বলে জানান। এই শিল্পী জুটির ঘরে একমাত্র পুত্র সন্তানের নাম ডেভিট মিলেস হালদার, বর্তমানে ডেভিট গিটার, তবলা এবং ড্রামস বাজানোয় পারদর্শী হয়েছেন। তার বাড়ীতে বয়স্ক মা রয়েছে, তিনিও তাকে সঙ্গীতে বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন। চন্দ্র শেখরের লেখা এবং সুর করা বেশ কিছু খ্রৃষ্ট্রীয় সঙ্গীত জনপ্রিতা লাভ করেছে বলে জানান। তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ইউটিউবে তবলার চ্যানেল করেছেন তা সম্মানের সাথে শিক্ষা দান করে যাচ্ছেন, তার সেই উদ্দেশ্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তার প্রতি আমাদের অন্তহীন কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন রইলো। তার ইউটিউবঃ চন্দ্রশেখর হালদার, ইমেইলঃ choundrasekharhaldar1973@gmail.com,ছবিঃ মোস্তাফিজ মিন্টু।