বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: রংপুরে কোটাবিরোধী ও কোটা সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, রাবার বুলেট নিক্ষেপ, লাঠিচার্জসহ ব্যাপক সহিংসতায় একজন নিহত এবং পুলিশ ও ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখনও চলছে। রংপুর নগরীর লালবাগ থেকে শুরু করে মডার্ন মোড়, পার্কের মোড়সহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
কোটাবিরোধী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেরোবির উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের বাসভবন এবং পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে, কোটা সমর্থকরা ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকা থেকে সরে গেছেন।
পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আসলে কোটা সমর্থক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কোটাবিরোধীরা লালবাগ থেকে পার্কের মোড় এবং মর্ডান মোড় পুরো চার কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান নিলে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দুপক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি, রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) লুটিয়ে পড়েন। তাকে অন্য শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ তার লাশ হাসপাতালের ডেড হাউজে নিয়ে রেখেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও সংঘর্ষে আহত কমপক্ষে ২৫ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থী মুকুল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় হামলা চালিয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে। পুলিশ সরাসরি গুলি করে বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যা করেছে।’ একই কথা বলেন আহত ইমন, ময়নুলসহ গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, সন্ধ্যা ৬টায় আহতদের হাসপাতালে দেখতে এসে বেরোবির শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘আমাদের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। আর কোনও শিক্ষার্থীকে যেন জীবন দিতে না হয়।’
এদিকে, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেড হাউজে রাখা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের মরদেহ পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। তার পরিচয় জানা গেছে। তার বাবার নাম মকবুল হোসেন। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। তারা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন আবু সাইদ।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আবু সাইদকে বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। তার শরীরে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। সম্ভবত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’ ময়নাতদন্ত করার পর পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে শহরে বিজিবি তলব করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটান তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। সময় টিভির ক্যামেরা পারসন তারিকুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। সময় টিভির রিপোর্টার রেদওয়ান হিমেলও আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাংলা ভিশনের ক্যামেরা পারসন জনি, মাছরাঙ্গা টিভির ক্যামেরা পারসনসহ কমপক্ষে ১০ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।