বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : দেশে ১/১১’র ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। রাজনৈতিক দলটির নেতারা বলছেন, দেশে গণতন্ত্র ও বিএনপি’র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আর ষড়যন্ত্র হবে এবং তা মোকাবিলা করতে হবে। আজ শুক্রবার বিকেলে ‘মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদারবাহিনী কর্তৃক খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বন্দি দিবস’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনায় এ কথা বলেন দলটির নেতারা। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলে কোনো কোনো সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা।
১৯৭১ সালে ২ জুলাই সন্তানসহ বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানী ঢাকার একটি বাসা থেকে পাকিস্তানী বাহিনী গ্রেপ্তার করে, বিজয় দিবসে তিনি মুক্ত হন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আরোচনায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকট আব্দুস সালাম।
সভায় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশকে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই, স্বাধীনতার স্বপ্ন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পুরণ করতে চাই, শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত কাজ যদি বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দেশের মানুষের অধিকার যদি ফিরিয়ে আনতে চাই আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই। তরুণদেরকে বলব, সামনে এগিয়ে আসুন। আর সময় নেই। এখন জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এই আন্দোলন সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, এই আন্দোলন এই সংগ্রাম কোনো দলের জন্য নয়। এই আন্দোলন দেশের মানুষের জন্য, জাতির জন্যে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ জিয়াউর রহমান সেখানে সফল। যার কারণে ষড়যন্ত্র হয় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি শাহাদাত বরণ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল বিএনপি শূন্য হয়ে যাবে। জিয়াউর রহমানের উত্তরসুরী খালেদা জিয়া দুর্দিনে বিএনপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং দলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত করেছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাদের দুই জনের সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানকে নিয়ে ভয়। এ জন্য তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের হাতে বন্দী ছিলেন, এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে বন্দী। ১/১১’য় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের মাটি ও মানুষকে ছেড়ে তিনি যাননি। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ওয়ান ইলেভেনে ১৩টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল- তা মেনে নিলে ম্যাডামকে মুক্ত ও বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হবে। প্রতিটি প্রস্তাবই ছিল দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্বের বিরুদ্ধে যার কারণে তা মেনে নেননি। হ্যাঁ, একটা জায়গায় সমঝোতা করতে হয়েছিল, তা ছাড়া তোমাদের জীবিত বের করতে পারতাম না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে থামাতে ১৯৭১ সালে ২ জুলাই বেগম খালেদা জিয়াকে দুই শিশু সন্তানসহ (তারেক ও কোকো) আটক করা হয়েছিল। তেমনি ওয়ান ইলেভেন সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে থামাতে দুই সন্তানসহ (তারেক ও কোকো) তাকে আটক করা হয়েছিল। এর আগে দরকষাকষি হয়েছিল। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া অথবা ম্যাডামকে বিদেশে চলে যেতে হবে, নেত্রীর মুখে শুনেছি। ওইদিন আমাদের নেতা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি, কেন আমাকে বিদেশ যেতে হবে? আমার যদি কোনো অন্যায় থাকে বিচার করুক। বিচার তো করতে পারলো না, তারা নির্যাতন করল।’
সেদিনও খালেদা জিয়া মাতৃত্ব নয়, দেশ ও দেশের মানুষে বেছে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র আমাদের সামনে আরও আছে। আমরা এখনো নেত্রীকে মুক্ত করতে পারলাম না।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কিছু সুধীজন আমাদের মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে থাকেন। তাদেরকে সবিনয়ে বলব, এই কথাগুলো প্রকারন্তরে ফ্যাসিবাদকে উৎসাহীত করে। যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় থাকার পথকে প্রসস্থ করে। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। সমস্যা দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। আমাদের নেতৃত্ব পদে পদে পরীক্ষিত এবং পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের নেতৃত্ব যারা দেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র হবে, অপপ্রচার চালানো হবে, আমরা যেন কোনোভাবে বিভ্রান্ত না হই। সেদিকে কান না দিয়ে আমাদের কৌশল আমরাই নির্ণয় করি। এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে বর্তমান নেতৃত্বকে তার পাশে থেকে সাহসী করি এবং আমরা যেন আমাদের কাজটি সততার সাথে করি। এই সরকার সম্ভবত পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে না। সেক্ষেত্রে সরকার আরেকটি পাতানো নির্বাচন করতে পারে। এই সময়ে আমাদের ওপর চাপ আসতে পারে। সেই চাপে যদি আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নত না হয়, আমাদের নেতা তারেক রহমান নত না হয়, আপোসহীন নেত্রীর কর্মী হিসেবে আমাদের ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপোসহীন থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’