বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দীঘির কথা। যেখানে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত চারপাশ। এসব অতিথি পাখি দেখতে ভিড় করে জেলা ও আশপাশের জেলার পাখিপ্রেমীরা।
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। এই উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন রামরাই দীঘি। প্রতিবারের মতো এইবারও এই দীঘিতে ভিড় জমিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরায় দীঘিটি যেন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত।
রামরাই দীঘির পানিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে অতিথি পাখির। সন্ধ্যা নামলেই দীঘিপাড়ের লিচুবাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। ৪২ একর জায়গাজুড়ে রামরাই দীঘিটি অবস্থিত। দীঘির পাড়ে চারদিকে সাড়ে ৮০০’র অধিক লিচুগাছ রয়েছে।
এদেশের নদনদী, হাওর-বাঁওড়ের ভালোবাসার টানে লাখো হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরাই দীঘিতে আসে তারা। রাণীশংকৈল উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় রামরাই দীঘির অবস্থান।
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে রামরাই দীঘিতে অতিথি পাখি দেখতে আসা বেলাল হোসেন বলেন, প্রতি বছর এখানে অতিথি পাখি দেখতে আসি। অনেক সুন্দর আর নানানরকম পাখি দেখে বারবার মুগ্ধ হই। নৌকা নিয়ে কাছে যাই, ছবি তুলি, ভিডিও করি। খোলামেলা এত অতিথি পাখি দেখে মনটা ভরে যায়।
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ থেকে অতিথি পাখি দেখতে আসা নাজমুল হক বলেন, এত সুন্দর সুন্দর পাখি শীতের সময় আমাদের দেশে আসে তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখতে আসছি।
পুরো পুকুরে অনেক পাখি। নৌকা দিয়ে কাছ থেকে পাখিগুলো দেখলাম ভালো লাগছে অনেক।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলা থেকে অতিথি পাখি দেখতে আসা শাম্মি আক্তার বলেন, আমি ফেসবুক, ইউটটিউবে দেখছি যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি শীত মৌসুমে আসে। তবে এবার রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দীঘিতে পাখি দেখতে আসছি। পুকুরটাও অনেক বড় আর চারপাশে অতিথি পাখির ঝাঁক। দেখে সত্যি মন ভরে গেল।
উপজেলা রাণীশংকৈলের বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ বলেন, শীত এলে রামরাই দীঘি অতিথি পাখি দিয়ে ভরে যায়। অনেক দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে এ অতিথি পাখি দেখতে। পাখিরা সকালে একবার দীঘিতে আসে কিছু সময় অবস্থান করার পরে বিভিন্ন বিলে চলে যায়। পরে বিকালে আসে। এবং সন্ধ্যার পর পর্যন্ত থাকে। অন্ধকার হলেই দীঘির চারপাশে যে লিচুগাছ আছে সে গাছে ফিরে যায়।
রামরাই দীঘির কেয়ারটেকার হেদলু রাম বর্মন বলেন, শীত এলেই রামরাই দীঘিতে চোখে পড়ে নানা রঙবেরঙের নাম জানা, অজানা পাখির। এসব অতিথি পাখি প্রকৃতির বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব ও প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত। এই পাখিগুলো রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।
রামরাই দীঘির মৎস্যচাষি নওরোজ কাউসার কানন বলেন, অতিথি পাখির আগমনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন অতিথি পাখির কোলাহলে মুখরিত রামরাই দীঘি। পাখিরা যেন সুন্দর একটি অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনসহ আমরা সর্বদা নজরদারি করছি। অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণে কোনো ধরনের বাধা নেই। বেআইনিভাবে পাখি শিকার হচ্ছে না। অনেক পাখি শিকারিও আসেন পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে। আমরা সব সময় তাদের নিরুৎসাহিত করি। কারণ অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে অতিথি হয়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ৪২ একর জায়গায় রামরাই দীঘিটির অবস্থান। প্রতি বছর অনেক দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে এই দীঘিতে। গাংচিল, পানকৌড়ি, পাতিহাঁসসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই পাখি আর দীঘির মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন। এখানে পাখি শিকারের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি পাখি শিকার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।