রাঙামাটি প্রতিনিধি : সোমবার দুপুরের আগুনের লেলিহান শিখায় সাজেকের মেঘে ঢাকা সুন্দর পরিবেশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।যা স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবেন তা নিয়ে এখন চিন্তিত সাজেকের রিসোর্ট মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডের পর সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল সোমবার রাতে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, ফলে এখন থেকে পর্যটকরা সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে পারবেন।
অপরদিকে, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
সোমবার রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
তদন্ত কমিটিতে রাঙামাটি স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে আহ্বায়ক এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন,বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক, খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী।
এই তদন্ত কমিটি সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ প্রেরণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন।কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাজেকের ভয়াবহ আগুনে ৩৫ টি রিসোর্ট ,২০টি দোকান ,৩৬ টি ঘরবাড়ী ও ৭টি রেষ্টুরেন্ট সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে সাজেক কটেজ এন্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।এলাকাবাসী জানান, আজ সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আগুনে পুড়ে যাওয়া তাদের প্রতিষ্ঠানের পোড়া টিন ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন। এত বড় ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবেন সেই চিন্তায় রয়েছে সবার চোখে মুখে।
সাজেক কুড়েঘর রিসোর্টের জোতেন ত্রিপুরা বলেন, সাজেক এখন মৃতু্্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। খুবই খারাপ লাগছে সাজেকের এই অবস্থা দেখে। তিনি বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও আমরা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে দুপুরে সাজেকে বিজিবি ও সেনাবাহিনী ও রিসোর্ট সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষতিগস্থ প্রায় ২ শ জনকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।তিনি বলেন,আগুনে ঘরবাড়ি হারিয়ে কেউ কেউ মন্দির বা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন। অনেকে সামান্য কিছু মালামাল ও আসবাবপত্র রক্ষা করতে পারলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় শেষ সম্বল হারানো মানুষেরা।
সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, সোমবার রাতে যেসব পর্যটক সাজেকে ছিল তারা আজ সকালে চলে গেছেন। তাদের কারো কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
এদিকে, সাজেক এর পেদাটিংটিং রেষ্টুরেণ্ট ও মাচাং বিলাস রেষ্টুরেন্ট এর পরিচালক কামরুল হাসান তোহা বলেন, সোমবারের ভয়াবহ আগুনে আমাদের একটি রেষ্টুরেন্ট ও ১ টি রিসোর্ট পুড়ে গেছে। এতে আমাদের প্রায় ৯০ লক্ষ টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
সাজেক কটেজ এন্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাংগাঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, গতকালকের আগুনে আমরা ৪টি রিসোর্ট ও ১ টি রেষ্টুরেন্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলাম। আমার ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি বলেন , আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবো সরকার যাতে আমাদেরকে আর্থিক প্রনোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করেন যাতে করে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। তিনি বলেন, গতকালকের অগ্নিকান্ডে আমাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। রাহুল চাকমা জন আরো বলেন, সাজেকে আগুন দ্রুত ছড়ানোর কারন হচ্ছে এখানে পানির অভাব এবং একটি ফায়ার ষ্টেশন নাই। তাই আমাদের দাবী থাকবে এখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপন করা হোক।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ সচিব বিশ্বজিৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, সাজেকের ক্ষতিগ্রস্থদেরকে বিজিবি -সেনাবাহিনী থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যেগে একটি মেডিকেল টিম সাজেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের চিকিৎসা প্রদান করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, সাজেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে আজকে রাতে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক সাজেকের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।
উল্লেখ্য,গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) দুপুরে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর পৌনে ১টার দিকে রুইলুই ভ্যালির ইকো ভ্যালি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা দ্রুত আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রায় ৩৫টি রিসোর্ট, ২০ টি দোকান ও ৩৬ টি বসতঘর ও ৭ টি রেষ্টুরেন্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।