বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: পোশাক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের করোনা টিকা প্রদান কর্মসূচী রোববার সকালে গাজীপুরে উদ্বোধন করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগরের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অতিধি হিসেবে স্থানীয় কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা ডেনিম লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় ওই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কারখানা শ্রমিকদের এই টিকা দান কর্মসূচী শুরু করা হলো।
প্রথম পর্যায়ে ৪টি কারখানার ১২ হাজার শ্রমিক কর্মচারি টিকা পাবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদের এভাবে টিকা দেয়া হবে। এ ব্যপারে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে পোশাক শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান মেয়র।
জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে টিকা নেবার বেলায় বয়সের সীমা তুলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচী সরকারের একটি চমৎকার উদ্যোগ, যা মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
প্রথম ডোজ দেয়ার পূর্বে রেজিস্টেশন ছাড়া শ্রমিকদের ভ্যাকসিনেশন শুরু করা হলেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগে তাদের রেজিস্ট্রেশন শুরু করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি স্ব-স্বপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক।
রোববার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দেখিয়েই গাজীপুরে চারটি কারখানায় একযোগে শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচী চলছে।
সিভিল সার্জন মো: খায়রুজ্জামান বলেন, কোভিড প্রতিরোধ করার জন্য কোভিডের ম্যানেজমেন্টের জন্য আমাদের (গাজীপুরে) টিকাদান কর্মসূচী ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবং সেটা অব্যাহত আছে। সারা দেশে গার্মেন্টস, পোষাক ও কলকারখানার অন্যান্য যে শ্রমিকরা আছে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, আন্তরিকতায় ও তাঁর চেষ্টায় আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমাদের যে টিকাদান কর্মসূচী তা হসপিটাল বেইজড হয় কিন্তু আজ আমরা গার্মেন্টসে গার্মেন্টসে গিয়ে টিকা দিচ্ছি। এ কাজটি করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমাদের যে টিম তাদেরকে প্রশিক্ষিত করেছি, ভ্যাক্সিনেটর আছে তাদের প্রশিক্ষিত করেছি। আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
ঈদের আগে আমরা চারটা গার্মেন্টসে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছি। আমাদের আজকে (বোরবার) গাজীপুর মহানগরের তুসুকা ডেনিম, তুসুকা ট্রাউজার, স্প্যারো এপারেলস ও রোজভ্যালী নামের চারটি পোশাক কারখানার প্রায় ১২হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে টিকা দেয়ার চেষ্টা করবো, যতক্ষণ এটা শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত টিকাদান চলবে।
সোমবার আরও আটটা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করার ইচ্ছা আছে। পর্যাক্রমে সমস্ত গার্মেন্টসকে টিকাদানের আওতায় আনা হবে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শ্রমিকরা সম্মূখ সারির যোদ্ধা হিসেবে দেশের ইকনোমিতে কাজ করছেন। এ টিকা নেয়ার ফলে তারা আরও নিরাপদ থেকে কাজ করতে পারবেন। আমরা সবাই যেন নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে পারি তারজন্য প্রতিদিন এ টিকাদান কর্মসূচী চালিয়ে যাবো। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করছি।
তুসুকা কারখানায় সুপারভাইজার ওবায়দুর হক বলেন, সহজে টিকা দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি আগেও চেষ্টা করেছিলাম টিকা দেয়ার জন্য কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলার কারণে টিকা আর নেয়া হয়নি।
একই কারখানার শ্রমিক রত্না বলেন, আমরা করোনার টিকা চাই, টিকে থাকতে চাই। কাজ করতে চাই। কাজ করে নিজের এবং দেশের উন্নতি করতে চাই। কারখানায় গিয়ে করোনা টিকা প্রদান করায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ টিকা নিয়ে শ্রমিকদের করোনা যুদ্ধে সংগ্রাম করতে আরও সাহস যোগাবে। টিকা নিয়েছি এখন গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ায় আর সমস্যা হবে না। নিজেও সুস্থ থাকবো পরিবারের সবাইকেও সুস্থ রাখতে পারবো।
সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (উত্তর) মো. জাকির হাসান, মার্কস এন্ড স্পেন্সারের হেড অব কান্ট্রি স্বপ্ন ভোমিক ও কেয়ার বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং, বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান, সহ সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো. রহমতুল্লাহ্, তুসুকা ডেনিম লিমিটেডের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, মার্কস এন্ড স্পেন্সারের সিনিয়র সোশ্যাল কমপ্লিয়েন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমান, কেয়ার বাংলাদেশে ডিরেক্টর হেলথ প্রোগ্রাম ডা: ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার এবং হেড অফ আরবান হেলথ ডা: মো. জহিরুল আলম আজাদ।