বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক:তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আজ নিজের স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করে, ফতোয়া দেয়, গরম গরম বক্তব্য দেয়। অথচ নিজে ইসলাম সম্মতভাবে পরিচালনা করে না। এই ধরনের নষ্ট ও ভণ্ড নেতৃত্বকে বর্জন করার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের আহ্বান জানাই।
রোববার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথমত গতকাল আমি অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, মূলত দেশ ডিজিটাল হওয়ার কারণেই এটি লাইভ দেখতে পেলাম। একজন নারীসহ হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে কিছু মানুষ আটক করেছে। সেখানে তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছেন, সেই নারী তার বিবাহিত স্ত্রী। যদিও মামুনুল হক যে নাম বলেছেন সে নারী ভিন্ন নাম বলেছেন। সে নারীর পিতার নাম মামুনুল হক যেটা বলেছেন সেটার সাথেও মিল নেই। এর কিছুক্ষণ পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেলাম মামুনুল হক তার নিজের স্ত্রী তার সাথে তিনি সংসার করেন তাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, তুমি কিছু মনে করো না এটা শহীদ ভাইয়ের স্ত্রী।
তিনি বলেন, উত্তেজিত জনতা যখন তাকে আটক করেছে তখন আল্লাহর কসম খেয়ে বলেছেন, তার স্ত্রী, অপরদিকে বিবাহিত স্ত্রী যাকে নিয়ে সংসার করেন চারটি সন্তান আছে, তাকে ফোন দিয়ে বলছেন, তুমি কিছু মনে করোনা আমি পরিস্থিতির কারণে বলেছি। এই ঘটনাগুলো হেফাজত ইসলামের নেতাদের ও যারা তাদের সমর্থন করেন তাদের কেমন লাগছে জানি না। তবে আমার ভীষণ লজ্জা হচ্ছে। আসলে এই সমস্ত নেতৃবৃন্দ মামুনুল হকসহ যারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে অপচেষ্টা চালিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা যে তাদের নেতৃত্ব যে নষ্ট ও ভণ্ড এটারই প্রমাণ হচ্ছে গতকালকের ঘটনার প্রবাহ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি এ জন্য মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানাবো এসব নষ্ট ও ভণ্ড নেতৃত্বকে বর্জন করার জন্য। মামুনুল হকরা ইসলামের ধ্বজা ধরে, ইসলামের লেবাস পরে আসলে কী করছেন সেটাই গতকালকে বেরিয়ে পড়েছে তাকে আটক করার প্রেক্ষিতে। ইসলাম কখনো এগুলো অনুমোদন করে না। তিনি এও বলেছেন, ওই নারীকে নিয়ে তিনি ‘রিলাক্স’ করতে গেছেন।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে যখন সবাই ঘরবন্দি তখন তিনি বিলাসবহুল রিসোর্টে গেছেন রিলাক্স করতে। এরা যে ইসলামকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে এবং ভণ্ড লেবাস ধরে সেটার প্রমাণ হলো গতকালকের ঘটনায়। যিনি নিজেকে আলেম হিসেবে পরিচয় দেন তিনি এ ধরনের কাজ করছেন। ইসলামতো এগুলো অনুমোদন করে না। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ‘ওই নারী তার স্ত্রী নন। বৈধ স্ত্রী হিসেবে কোনো কাগজপত্র তার কাছে নেই’। তাহলে কী দাঁড়ায়, তাই অনুরোধ জানাবো এই নষ্ট ও ভণ্ড নেতৃত্বকে বর্জন করার জন্য।
নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়ে আন্দোলনের বিষয় উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, মামুনুল হককে জনতা আটক করার পর মসজিদের মাইক ব্যবহার করে তাকে উদ্ধার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে, একজন অবিবাহিতা নারীকে নিয়ে রিসোর্টে গিয়ে রিলাক্স করতে যাওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদের মাইক ব্যবহার করা মানে ইসলামের ওপর কালিমা লেপন করা। এখানে আরো একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যখন হেফাজতের ব্যানারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আগুন দেয়া হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালানো হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ ঢাকাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তখন নিপুণ রায় (বিএনপি নেত্রী) টেলিফোন করে কর্মীদের বাসে আগুন দেয়ার জন্য বলে। আর গয়েশ্বর রায় যখন সেটাতে সমর্থন দেন, তখন বুঝতে হবে এটা ইসলাম রক্ষা নয়, হেফাজতও নয়, এটা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আসলে বিষয়টা ইসলাম নয়, নরেন্দ্র মোদির আগমনও নয়, ইসলামকে হেফাজত করতেও নয় বরং ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা। পাশাপাশি দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।