বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পাটের জাগ হারানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এতে কমপক্ষে চল্লিশজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তু দফায় দফায় উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের পরমেশ্বরদী খাল-কাজী পাড়া এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িঘর-দোকান ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে ছয়জন পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে।
পুলিশ সদস্যরা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। উভয় পক্ষের বাকি আহতরা বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে পলাতক রয়েছে।
খবর পেয়ে বোয়ালমারী ও সালথা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দু’পক্ষের সংঘর্ষ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেন।
মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর, বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি মাসুদ শেখের সমর্থক মনিরুল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক আ: মান্নান মাতুব্বরের সমর্থক নজরুল মোল্যা স্থানীয় কুমার নদীতে পাশাপাশি পাট পঁচানোর জন্য জাগ দেয়। কয়েক দিন পরে মনিরুলের পাটের জাগ হারিয়ে গেলে তিনি নজরুল মোল্যার বাড়ি গিয়ে পাটের জাগের ব্যাপারে জানতে চায়। এ সময় নজরুল মনিরুলকে বলে আমার পাট উঠিয়ে নিয়ে এসেছে; তোমারটা কোথায় গেছে তা জানি না। ওই সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনা ও কোরবানীর গোশত কিভাবে ভাগাভাগি হবে এ নিয়ে ময়েনদিয়া ও পরশ্বেরদী গ্রামে ঈদের আগের দিন দু’গ্রুপের বিভিন্ন সময় গোপনে মিটিং চলছিল।
এ ঘটনার জেরে শুক্রবার সাড়ে ৯টার দিকে দুই গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, রামদা ও লাঠিসোঠা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় পাশের সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের কিছু লোকজন মাসুদের লোকজনের সাথে পক্ষ দেয়।
পরমেশ্বরদী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি মো: মাসুদ শেখ বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। ঈদেও বাড়ি যাইনি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনা মুকুল আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাই তার সাথে রাজনীতি করি। তবে মান্নান মাতুব্বর বিভিন্ন সময় আমাকে ও লোকজনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ময়েনদিয়া বাজারে ব্যবসা করতে হলে আমার সাথে রাজনীতি করতে হবে। শুনেছি ময়েনদিয়া বাজারে আমার দোকান ও আমার পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে মান্নান মাতুব্বর গং।
আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেয়া পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আ: মান্নান মাতুব্বর বলেন, আমি স্থানীয় রাজনীতি করি। আমার লোকজনকে দলে নিতে মাসুদ বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখায়। আজকে তার লোকজন আমার পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালালে আমার লোকজনও তাদের উপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। আমার দু’জন মারাত্বক আহত হয়ে ফরিদপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে।
এ ব্যাপারে পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নুরুল আলম মিনা মুকুল মুঠোফোনে বলেন, আমার কোনো গ্রুপ নাই। সবাই এ ইউনিয়নের বাসিন্দা। মান্নান মাতুব্বর গ্রুপ ও মাসুদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আগের একটি সংঘর্ষের ঘটনায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়। সংঘর্ষের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে লিপ্তকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সর্টগানের গুলি নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জ করা হয়। সংঘর্ষের এলাকা বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তু কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
এদিকে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা গেছেন শহীদ ফকির (৪৭) নামে এক ব্যাক্তি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
শহীদ ফকির পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের রাজ্জাক ফকিরের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক। তিনি বিবাহিত এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
শহীদ ফকিরের খালাতো ভাই মান্নান ফকির বলেন, গতকাল সকালে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের কাটা খাল এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের রামদায়ের কোপে মারাত্মত ভাবে আহত হন শহীদ। তাকে দ্রুত ফরিদপুর ট্রমা সেন্টোরে এনে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মারা যান তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজের অর্থপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনাদি রঞ্জন মন্ডল বলেন, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে শহীদ ফকিরের পায়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এছাড়া তার পেটেও ধারাল অস্ত্রের আঘাত ছিল। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা নেয়ার প্রস্তুতির আগেই তিনি ফরিদপুর ট্রমা সেন্টারে মারা যান।