এরপর সিদ্ধান্ত হলো শাকিল বাজার করে আনবেন স্ত্রী রীনা রান্না করে দেবেন। ঠিক সেভাবেই শাকিল অফিস থেকে ফিরে বাজার করে আনেন। স্ত্রী রান্না করে দেন। বাচ্চারা সেটাকে প্যাকেট করে দেয়। এরপর যে কোনো একজন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে মগবাজার রেলগেট থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত ছিন্নমূল মানুষদের খাবার বিতরণ করেন।
মগবাজার রেলগেট এলাকায় লকডাউনে খাবার বিতরণ করতে দেখা যায় একজন ব্যক্তিকে। এই কৌতুহল থেকেই এগিয়ে গিয়েছিলাম গত পরশু (বৃহস্পতিবার) রাতে। সেখানে খাবার বিতরণ করছিলেন শাকিল। তারপর জানালেন এই খাবার বিতরণের গল্পটা।
শাকিল বলেন, ‘প্রথমবার যখন লকডাউন শুরু হলো, তখনই চিন্তা করেছিলাম তারপর নেমে পড়ি। প্রথমে সবকিছুই কঠিন হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা যখন অভ্যাসে পরিণত হলো তখন এটা দায়িত্বে রূপ নিলো। না কোনো ক্লান্তি লাগে না, বরং আনন্দিত হই যখন মানুষগুলো আমার খাবার নিয়ে আসার অপেক্ষা থেকে, খাবার পেয়ে আনন্দে হাসে। এটা এক অন্যরকম ভালো লাগা, যার প্রকাশ আমার পক্ষে সম্ভব না।’
স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাকিল বলেন, ‘একদম ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ করি আমি। প্রথম দফায় সাড়ে ৮ হাজার প্যাকেট খাবার দিয়েছিলাম। এরপর তো থেমে নেই। এবারের বিধি নিষেধ শুরুর দিন থেকে খাবার দিয়ে যাচ্ছি। আসলে আমার স্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া এমন একটি কাজ করা সম্ভব হতো না।’
খাবার নিতে আসা মহব্বত আলি নামের ৬০ বছর বয়সী একজন ছিন্নমূল ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের তো ছেলে-মেয়ে নেই। রাস্তায় রাস্তায় থাকি। রাস্তায় খাওয়ার চিন্তায় ছিলাম। এই বাবায় (শাকিল) আমাদের প্রথম থেকে খাবার দিচ্ছে। আমাদের রাতের খাবার নিয়ে চিন্তা নাই।’
একই কথা বললেন পঞ্চাশোর্ধ্ব তাহমিনা। এই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী নাই, পোলাপাইন নাই। রাস্তায় রাস্তায় পইড়া থাকি। লকডাউনে খাওয়া নিয়া কয়দিন ঝামেলা পড়ছিলাম। না খাইয়া রইছিলাম। পরে এইহানে আইয়া খাওয়া পাই। এহন লকডাউন হইলেই আমি এইহানে চইলা আসি।’
শাকিল বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সন। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠন সম্মাননা দিয়েছেন ।