বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: এক সময় শিক্ষার্থীদের কোলাহল তার চারপাশে ঘিরে থাকত। কিন্তু করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় জীবন বাঁচাতে বেছে নিয়েছেন অন্যপথ। তিনি এখন চায়ের দোকানদার। বলছি মানুষ গড়ার কারিগর খায়রুল ইসলাম বাদশা মিয়ার কথা।
জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের শিক্ষিত পরিবারের সন্তান খায়রুল ইসলাম বাদশা। সরকারি চাকরি না করে নিজের বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে রেজিয়া মার্কেটের পাশে চার শতক জায়গা কেনেন। আশায় বুক বেধে ২০০১ সালে ৮-১০ জন শিক্ষিত ছেলে মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গড়ে তোলেন আহমোদিয়া স্কুল অ্যান্ড কোচিং সেন্টার। ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলত স্কুলটিতে।
গিদারী ইউনিয়নের মহসিন আলী জানান, স্কুলটিতে পড়ালেখার মান ভালো হওয়ায় দূরদুরন্ত থেকে শিশুরা এই স্কুলে পড়তে আসতো। আমার দুই মেয়েও এই স্কুলে কোচিং করত।
কাউন্সিলের বাজারের আরজিনা বেগম জানান, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ভালো নিশ্চিন্তে ছিলেন। পড়ালেখা ভালোই হতো। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিনি মেয়েকে নিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন। অতো টাকা দিয়ে প্রাইভেট মাস্টারও রাখতে পারছেন না, মেয়েকে পড়াতেও পারছেন না।
স্কুলের শিক্ষক হামিদা বেগম জানান, স্কুলের আয় দিয়ে ভালোই চলছিল। ১০ জন শিক্ষকসহ সকলের সংসার। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। স্কুলের বেতন যা আসতো তাতে কৃষি মজুর স্বামীসহ চার জনের সংসারে অভাব হতো না। কিন্তু এখন তিনি ধার দেনা করে আর স্বামীর সামান্য আয়ে কোন মতো চালিয়ে নিচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বাদশা মিয়া জানান, আর কতো টানা যায়। করোনা ও লকডাউনে তার স্বপ্নের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে যাওয়ায় তার কাছেএক দুঃস্বপ্নের মতো । তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। কি বলবো, কি ছিলাম আর এখন কি হলাম।
তিনি জানান, করোনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। নিজের জায়গা জমি বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে বন্ধ করে দেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর নিজের পাঁচ ছেলে মেয়ের সংসার চালাতে গিয়ে সংকটে পরেন। এক প্রকার বাধ্য হয়ে বর্তমানে বাদশা মিয়া স্কুল ঘরের দুই পাশের বেড়া খুলে চায়ের দোকান খুলে বসেন। নিজের হাতে চা তৈরি করে খদ্দের মেটান। খদ্দেরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার তুললেও বাস্তবতা মেনে নিতে তাকে প্রধান শিক্ষক থেকে চায়ের দোকারি হতে হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, ‘করোনাকালীন অসংখ্য স্কুল ও কোচিং সেন্টার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এসব স্কুলের শিক্ষকদের আমরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।’