বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইসকা বিলে দুই বাল্কহেডের সংঘর্ষের পর যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ট্রলারের মাঝি সোনা মিয়া ওরফে সোনা মাঝিকেই দুষছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং মাঝির ভুলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী।
সোনা মাঝি বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ট্রলারডুবির পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট বিকেল সোয়া ৫টায় বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে যাত্রীবোঝাই ট্রলার ডুবে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার দিনই তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে করা ওই কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তবে দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেন রেজা।
ট্রলারডুবির ঘটনায় ২৮ আগস্ট দুই বাল্কহেডের মালিক, মাঝি ও সহযোগীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া। তিনি ট্রলাডুবিতে তাঁর চার স্বজনকে হারিয়েছেন। মামলায় এমভি ইয়া রাসূল আল্লাহ নৌপরিবহনের তিন চালক ও সহযোগী জমির মিয়া, মো. রাসেল, খোকন মিয়া এবং মালিক মো. সোলায়মানকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া অপর বাল্কহেড এমভি রউফ শাহী নৌপরিবহনের মালিক মোস্তফা মিয়া এবং চম্পকনগর নৌকাঘাট নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের দুই সদস্য সোলাইমান মিয়া ও মিস্টু মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মোস্তফা মিয়া গত ২৩ আগস্ট কাতার থেকে দেশে ফেরেন। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি সোনা মিয়া ও তার দুই সহযোগীকে মামলায় আসামি করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় চম্পকনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার নৌকাঘাটের উদ্দেশে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ছেড়ে আসে। ট্রলারটি লইসকা বিলে আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা খালি বাল্কহেড এমভি ইয়া রাসূল আল্লাহ নৌপরিবহনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এরপর খালি বাল্কহেডটির পেছনে থাকা বালুভর্তি অপর বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়।
ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী জামাল মিয়া জানান, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় বসবাস করেন। ঘটনার দিন বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে চম্পকনগর থেকে ট্রলারে উঠেন তিনি। দুটি বাল্কহেড আসতে দেখে ট্রলারের মাঝিকে ডান পাশ দিয়ে যেতে বলেন যাত্রীরা। কিন্তু মাঝি সেটি আমলে না নিয়ে বাম পাশ দিয়ে গিয়ে দুই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লাগায়। ট্রলারের মাঝির ভুলের কারণেই এতো প্রাণহানি হয়েছে বলে জানান জামাল মিয়া।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রলারডুবির ঘটনার তদন্ত কমিটির সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, ‘ট্রলারডুবির কারণ এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তদন্ত কাজ এখনও চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের সাক্ষ্যতে বলেছেন, ট্রলারটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন এবং ট্রলারের মাঝির ভুলে খালি বাল্কহেডে ধাক্কা লাগে। এরপরই ট্রলারের মাঝি টালমাটাল হয়ে যায়। এর ফলে বালুভর্তি অপর বাল্কহেডে ধাক্কা লেগে ট্রলারটি ডুবে যায়’।