কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মী ও আলেমদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের দাবিতে গত ১ আগস্ট বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত। তবে ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ ৪ আগস্ট শুক্রবার বেলা আড়াইটায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় দলটি। এজন্য গত ১ আগস্ট ডিএমপি কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি আবেদন জমা দেয় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ। এরপর সমাবেশ সফল করতে গত কয়েক দিনে দুই মহানগরী দফায় দফায় নানা প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিলি করেছে কয়েক লাখ প্রচারপত্র। সমাবেশ বাস্তবায়নে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন উপকমিটি, সমন্বয় কমিটি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কমিটি।
তবে গতকাল বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, জামায়াতে ইসলামীকে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
তবে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তও সমাবেশ করার বিষয়ে একই অবস্থানে থাকে জামায়াত। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু পাইনি। সেজন্য আমরা সমাবেশ করার ব্যাপারে এখনো আগের অবস্থানেই আছি। পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়ার পর নেতারা বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশ যদি অনুমতি না দিয়ে থাকে তাহলে তাদের এ সিদ্ধান্ত অন্যায্য। একটি গণতান্ত্রিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। এটি নাগরিক অধিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ। তিনি আরো বলেন, জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল ও আদর্শবাদী সংগঠন। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করি পুলিশ আমাদের সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।
দীর্ঘ এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। সেখানে তারা বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত করে। এরপর গত ১৫ জুলাই সিলেট মহানগরে সমাবেশের আয়োজন করলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও সমাবেশের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পরবর্তীতে গত ২৮ জুলাই দেশের সব মহানগর এবং ৩০ জুলাই জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াত। চট্টগ্রাম মহানগরে সংঘর্ষ ছাড়া অন্য জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করে দলটি। সর্বশেষ ১ আগস্ট ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
বিভাগীয় দায়িত্বশীলদের প্রস্তুতি সভা : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভাগীয় দায়িত্বশীলদের নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আবু সাদিক, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমনসহ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীলবৃন্দ।
সমাবেশ বাস্তবায়নে উত্তরের প্রস্তুতি সভা : রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ নয় বরং জনতার রাজপথ জনতার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে সরকারকে আদর্শিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। গতকাল রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উত্তরা পশ্চিম থানা আয়োজিত ৪ আগস্টের সমাবেশ বাস্তবায়ন উপলক্ষে থানা শূরা-কর্মপরিষদ ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদের নিয়ে প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। থানা আমির মাজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি ফিরোজ আলমের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন থানা নায়েবে আমির আবু হোসেন, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মশিউর রহমান ও আবু সাঈদ প্রমুখ।
অফিস সংস্কারের সময় শ্রমিকদের আটকের প্রতিবাদ : জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর রাজধানীর পল্টনের ৪৮/১ অফিস থেকে অফিস সংস্কারের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় ৬ শ্রমিক ও এক সিকিউরিটি গার্ডকে পল্টন থানা পুলিশের আটক করার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এক বিবৃতিতে বলেন, অফিস সংস্কারের সময় বিনা অপরাধে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের আটক করে নিয়ে যায় পল্টন থানা পুলিশ। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে আটককৃত সিকিউরিটি গার্ড ও শ্রমিকদের মুক্তি দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
একইসাথে সরকারের এহেন জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ সরকার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীসহ দেশব্যাপী অফিসগুলোকে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে জোরপূর্বক বন্ধ করে রেখেছে। সমাবেশের জন্য বারবার আবেদন করা হলেও প্রশাসন বিভিন্ন টালবাহানা করে আমাদের আবেদনগুলো নাকচ করে দিচ্ছে। গতকাল অফিস সংস্কারের সময় শ্রমিকদের আটক করার ঘটনার মধ্য দিয়ে মূলত সরকারের একদলীয় ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অত্যন্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। মহানগরী আমির বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজকের এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো স্পষ্ট প্রতীয়মান, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যস্ত। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত প্রজাতন্ত্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন দলের পক্ষ না হয়ে জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করার আহবান জানাচ্ছি। আপনাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ আচরণ আশা করি।
