বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের প্রত্যাখ্যান করে এর কড়া সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রীর দাবি, এটা শুধুমাত্র জনগণের কাছে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে করোনাযুদ্ধে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ার-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন। অবশ্য করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনে ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করেছেন মন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনে ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ করা হয় করোনা প্রতিরোধের কার্যক্রমে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা, লকডাউন, টিকা কাজ ও বিতরণে স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় ছিল না। করোনা মোকাবেলায় আগামী দিনের জন্য ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি।
পিআইবির সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিআইবি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে, এটা খুবই দুঃখজনক। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের সকল দেশ বা সংস্থা প্রশংসা করেছে বাংলাদেশকে। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশকে প্রশংসা করেছে। টিআইবি ঘরে রুমে বসে একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আমরা করোনা শনাক্ত করতে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি বলে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে। অথচ করোনা শনাক্তে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তারা (টিআইবি) বলছে আমরা কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য। অথচ সারাদেশে ১৫ হাজার বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধুমাত্র করোনা রোগের চিকিৎসার জন্য। যে কারণে ভারতের মতো এমন পরিস্থিতি তৈরি তৈরি হয়নি, এখনো অনেক দেশ যথাযথভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারেনি কিন্তু বাংলাদেশে এখনও লকডাউন চলমান।
টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমরা টিকা নিয়ে স্পষ্ট চুক্তি করে ভ্যাকসিন ক্রয় করেছি। আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ছিল। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনায় সামনের সারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ মোটেও গ্রহণযোগ্য না।
করোনার মধ্যে আইসিইউ বাড়াতে পারেনি বলে টিআইবি যে দাবি করেছে তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছর সেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ আইসিইউ ছিলো সেখানে এখন এক হাজারের অধিক আইসি এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টিআরবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে মন্ত্রী বলেন, এটা শুধুমাত্র জনগণের কাছে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। করোনার জন্য যে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে তার ব্যবহার করা হয়নি এমন তথ্যও সঠিক নয়। আমরা সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন মিথ্যাচার আমরা গ্রহণ করি না।
বসুন্ধরার আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ওটা চালু হলেও ছয় মাসে ছয়টা রোগী হয়েছে। এর পেছনে লাখ লাখ টাকা ভাড়া দেওয়ার কারণে সবার সাথে আলোচনা করে আইসোলেশন সেন্টার থেকে সরঞ্জাম বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যারা দুর্নীতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অধিদপ্তরের ড্রাইভার থেকে শুরু করে যারা অন্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমনকি ভুয়া রিপোর্টের দেওয়ার জন্য সাবরিনা এবং সাহেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে দেয়া হয়েছে। ভুয়া সনদ দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কোন জায়গায় এক হাজার কোটি টাকা, ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বা দুর্নীতি হয়েছে এরকম কোন তথ্য কি দেখাতে পারবে? এমন তথ্য দিতে পারবে না অথচ অন্য জায়গায় কোটি টাকা নিয়ে কানাডায় চলে গেছে। ৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে এ ধরনের কোনো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলমসহ অন্যান্যারা।