বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: মাহে রমজানের কদরের রজনী হচ্ছে সবথেকে উত্তম এবং মহামান্বিত রজনী। রাতটিকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ কদরের এই রাতে বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। এ জন্য লাইলাতুল কদরকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলা হয়।
পবিত্র কোরআনের সুরা কদরে বলা হয়েছে,
উচ্চারণ : ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই’ল ফাজর।
অর্থ : নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) কদর রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর (মহিমান্বিত) রাত, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।
শবে কদরের ফজিলত :
মক্কার হেরা গুহায় কদরের রাতে হযরত জিব্রাইলের (আ.) মাধ্যমে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেন মহান আল্লাহ তাআলা। তাই রাতটিকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।
শবেকদর এমন এক রাত, যে রাতে সৃষ্টজীবের পূর্ণ এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক প্রাণির রিযিক, জীবিকাসহ সর্বপ্রকার কাজ-কর্ম নির্ধারণ করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বা পরিমাপ নির্ধারণী রাত বলা হয়।
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত, বরকত ও প্রশান্তি নিয়ে অবতরণ করেন।’
শবেকদরের আমল :
শবেকদরের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজগুলোতে কিরাত, রুকু-সেজদায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করা উচিত। যাতে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায়। এই রাতে বেশি বেশি কোরআন পাঠ এবং মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়তে হবে।
এ ছাড়া নফল নামাজ, যেমন : তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়া উচিত। তাওবা-ইস্তিগফার, দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, কবর জিয়ারত করা বিশেষ করে পিতা-মাতার জন্য ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। কেননা বান্দা যখন তার প্রভুর কাছে চায়। আল্লাহ এতে ভীষণ খুশি হন।
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন (তিরমিজি শরিফ)। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পরওয়ারদিগার লজ্জাশীল ও দাতা; লজ্জাবোধ করেন যখন বান্দা তার কাছে দু’হাত ওঠায়, তখন তা খালি ফিরিয়ে দিতে’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, বায়হাকি শরিফ)
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রসুল উত্তর দিলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাওফা আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন’। (ইবনে মাজাহ শরিফ, সহিহ আলবানি)