রাঙামাটি প্রতিনিধি
পাহাড়ে জলপাইয়ের বাণিজ্যিক চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার রাঙামাটিতে ৫৯২ হেক্টার জমিতে জলাপইয়ের চাষাবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি কৃষি বিভাগ। এতে উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ২ শ মেট্রিক টন জলপাই।যার বাজার মূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা।
টক জাতীয় এ ফলটি রাঙামাটিতে পূর্বে বাণিজ্যিক চাষাবাদ তেমন ছিলনা । তবে বর্তমানে চাষিরা ধীরে ধীরে শুরু করছেন চাষ। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এতে করে চাষীদের মাঝে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ।একটি গাছে কমপক্ষে দেড় থেকে ২মণ জলপাই ধরে। বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাকা যে কোন অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি ও তেল তৈরিতে বেশী ব্যবহার হয় জলপাই। চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে জলপাইয়ের বাম্পার ফলনে রফতানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। জলপাই বিক্রয় করে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় জলপাই চাষীদের মুখেও হাসি ফুটেছে। জলপাই চাষ গ্রামীন অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জেলার জমি ও আবহাওয়া বেশ ভালো জলপাই চাষের জন্য। রাঙামাটি জেলায় প্রত্যেকটি বাড়িতে একটি-দুইটি করে জলপাই গাছ দেখা যায়। এর বিস্তার ঘটানো গেলে বাণিজ্যিক প্রসার ঘটানো সম্ভব।
এদিকে, রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জলপাই সংগ্রহ করে একজায়গায় একত্রিত করে বিভিন্ন জেলায় রফতানি করছেন। রাঙামাটির লংগদু উপজেলাতে মৌসুমি ফল জলপাইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে ।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের চাষী মো: সাজিব বলেন, আমি আমার বাড়িতে একটি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এছাড়াও পাহাড়ের ২ একর ঢালু জমিতে ৫০টির মত জলপাই গাছের বাগান করেছি। শীতের শুরুতে এর ফল দেয়া শুরু হয়। পাইকারী দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে পাওয়া যায়।জলাপইয়ের উৎপাদনে খরচ কম এবং লাভও বেশি। ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ মন্দ নয়।
লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের অারেক চাষী মো: সবুজ মিয়া বলেন, আমি শখ করে বাড়ির পাশের জমির পাহাড়ি ঢালুতে ২০টি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এই গাছ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দেয়। জলপাই গাছে এতো ফল আসে; যা পাতা থেকে ফল বেশি।এবার দুই লাখ টাকার জলপাই বিক্রি হয়েছে আমার। এই ফলের অনেক চাহিদা তাই বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না ,পাইকার বাড়িতে এসে জলাপই কিনে নিয়ে যায়।
গুলশাখালী ইউনিয়নের চাষী মো: ইদ্রিস বলেন, তিন একর জমিতে ১০৫ টি জলপাই গাছ লাগিয়েছেন ২ বছর আগে। প্রথম বছরেই বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম ফলনেই ৩ লক্ষ টাকার জলপাই বাগান বিক্রয় করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, টক জাতীয় ফল জলপাই দেখলেই জিভে জল আসে। এতে ভিটামিন, ভেষজ উপাদান, খাদ্যআঁশ, আয়রন, কপার, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক উপাদান, অলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে।তিনি বলেন, রাঙামাটির ১০ উপজেলায় জলপাইয়ের গাছ অাছে, কিন্তু বাগান নাই। তিনি জানান, এবার রাঙামাটি জেলায় ৫৯২ হেক্টর জমিতে জলপাই এর আবাদ হয়েছে। এবার ৬ হাজার ২শ মেট্রিক টন ফলও উৎপাদন হয়েছে। যার এতে করে জলাপাইয়ের বাজার মূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা। তিনি জানান, জলপাইয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ভবিষ্যতে জেলার অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক গতি সঞ্চার করবে। জলপাই উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
কেবল গ্রাম বা জেলা শহর নয়, ঢাকাসহ বড় শহরে জলপাই গাছ লাগানো যেতে পারে অতি সহজেই, যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য,জলপাই দিয়ে আচার, চাটনি, জ্যাম-জেলি প্রভৃতি তৈরি করা হয়। গাছে তেমন কোনো পোকামাকড় ও রোগ বালাই আক্রমণ করে না। বাংলাদেশের মাটিতে যেকোনো স্থানে সহজে জন্মাতে পারে। তাই এ পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলটি চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফল বিদেশে রফতানি করা যেতে পারে।
নোট : হোয়াটসঅ্যাপ এ ফুটেজ আছে।