বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর নিশ্চিত করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিতা ও মায়ের সামনে দলীয় কর্মী এসএম সরকার ওরফে হোসাইনের গালে জুতা মারতে বাধ্য করেন অব্যাহতি প্রাপ্ত মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। শুধু তাই নয়, ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে হোসাইনের অসুস্থ পিতা গিয়াস উদ্দিন সরকার মৃত্যুবরণ করেন। এতে সমালোচনার ঝড় উঠে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। নড়েচড়ে বসেন জেলা ছাত্রলীগের নেতারা। শুক্রবার রাতেই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ গণমাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করেন। শনিবার জরুরি সভা ডেকে অমানবিক আচরণ করা মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় আদর্শ ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে।
দলীয় সূত্রমতে, ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় পদ হারানো বিপাশ যশোর এমএম কলেজ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন। তার বাড়ি মহেশপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। বিপাশ তার ছোট ছেলে।
দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি ব্যক্তি নামে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। বিপাশ বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলের অনুসারী। লাঞ্ছিত হওয়া হোসাইন সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের সমর্থক। ফেসবুকে লেখালেখির সূত্র ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) বিপাশের সঙ্গে হোসাইনের বিরোধ চলে আসছিল। ৭ ডিসেম্বর রাত অনুমান ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত পিতার কাছে ছিলেন হোসাইন। খবর পেয়ে বিপাশসহ কয়েকজন আসেন সেখানে।
কথোপকথনের একপর্যায়ে শাস্তিস্বরূপ নিজের পা থেকে জুতা খুলে দেন বিপাশ। হোসাইনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নির্দেশও দেন তিনি। হোসাইন পা ধরে কয়েকবার ক্ষমাও চান তখন। তাতে বিপাশের মন গলেনি। বাবার মুমূর্ষু অবস্থা। নিরুপায় হোসাইন। বিপাশের নির্দেশমতো নিজ গালে জুতা দিয়ে আঘাত করতে থাকেন।
মা ফাতেমা খাতুনও দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে জুতাপেটার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। হোসাইনের পিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। যাশোর হাসপাতালে রেফার করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরপর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শাসক দলের মাঝেও নিন্দার ঝড় উঠে।
এদিকে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিবরণ বিশ্বাস যুগান্তরকে জানান, মহেশপুর উপজেলা সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও জেলা কমিটির সহ-সভাপতির পদে এখনো বহাল রয়েছেন আরিফুজ্জামান বিপাশ।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ জানান, সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি দানের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।