ক্যাম্পাস প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব স্যার ফজলে হাসান আবেদ গত ২০০১ সালে ব্র্যাক সংস্থার শাখা হিসেবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ব্র্যাক সংস্থার মতো সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথ উন্মুক্ত করণ। তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠানটি আদতেই একটি আদর্শ উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ-এর মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন রাহুরদশায় পড়েছে। বর্তমান কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি মতো চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে রয়েছে ৩টি স্কুল, ৪টি ইনস্টিটিউট, বিভাগ/অনুষদ ৮টি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ৬৬ মহাখালী, ঢাকাস্থ মোট ১১টি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে ২টি ভবন নিজস্ব আর বাকী ৯টি ভাড়া করা বহুতলা আবাসিক/বানিজ্যিক ভবন। এই ৯ টি ভবনের ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায় করতে হচ্ছে। বিপুল অংকের এই অর্থের একাংশ কমিশন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বেনিফিশিয়ারী গ্রুপ লুটেপুটে খাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে সম্পৃক্ত একটি অংশ। তারা মনে করছেন, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর গত ২৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না ঐ ব্যানিফিশিয়ারী গ্রুপটির ষড়যন্ত্রের কারণে। যদিও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করা আছে ঢাকার বাড্ডায়। অলস পড়ে থাকা বিশাল ক্যাম্পাসটিতে এখন ঘুনে ধরেছে। অচিরেই তা পরিত্যাক্ত ঘোষিত হবে বলে আশংকা করছেন সচেতন ঐ মহল।
৯ টি ভাড়া করা ভবন হয় আবাসিক নয়তো বানিজ্যিক। কোনটিও উচ্চ শিক্ষা প্রদানের উপযোগী করে তৈরি করা হয় নাই। ভবনগুলোর আসপাশের সড়কগুলো সরু ও অপ্রশস্ত। ফলে ক্লাস শুরু এবং শেষে ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। প্রায়শই রিকশাসহ বিবিধ যানবাহনের ধাক্কায় তারা আহত হচ্ছেন। বড় দূর্ঘটনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর আমাদের দেশে বড় দূর্ঘটনা না-ঘটা পর্যন্ত সাধারণত কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বেশ কয়েকবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে সিফট্ করার নোটিশ প্রদান করলেও তা বার-বার স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় উপেক্ষিত হচ্ছে। সাধারনত সর্বোচ্চ ১২ বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় অনুমতি পেয়ে থাকে। তারপর ওটাকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতেই হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকা স্বত্বেও কেন সেখানে সিফট করা হচ্ছে না তা বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হয়ে গেছে!! বিশ্ববিদ্যালটির সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিকাংশ মনে করছেন প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ-এর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এখন পড়তি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোন কোন বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও উপেক্ষিত হচ্ছে ইউজিসি’র নির্দেশনা। ইউজিসি’র নির্দেশনা হচ্ছে বছরে ২ টি সেমিস্টার চালাতে হবে। কিন্তু ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরে ৩ টি সেমিস্টার চালু রেখেছে। সেমিস্টারের শুরুতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এডভাইজিং-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব ছাত্র ছাত্রী সকালে এডভাইজিং-এর সুবিধা পায় তারা অভিজ্ঞ ফ্যাকাল্টিসহ কমপক্ষে ৪টি কোর্স নেওয়ার সুযোগ পায়। আর যারা বিকালে বা অন্য সময় এডভাইজিং-এর সুযোগ পায় তারা অনবিজ্ঞ ফ্যাকাল্টি এবং ২-৩ টি কোর্সের বেশি বরাদ্দ পায় না। ফলে তাদের শিক্ষা জীবন প্রলম্বিত হচ্ছে। ৪ বছরের অনার্স প্রোগ্রাম শেষ করতে নিয়মিত পাশ করে গেলেও সাড়ে ৪ বছর থেকে ৫ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। অত্যন্ত উচ্চ হারের টিউশন ফি চালিয়ে নিতে অভিভাবকদের কি রকম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক বিভাগগুলো অতিরিক্ত জনবলের ভারে ন্যুজ। এক জনসংযোগ বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত আছেন প্রায় ১০ জন। এতোবড়ো জনবল নিয়ে বিভাগটি কি জনসংযোগ করছে তার উত্তর কেউ দিতে পারছে না। অধিকাংশইকেই গল্পগুজব করে অফিস টাইম পার করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডেও রয়েছে অস্পষ্টতা। ইউজিসি বারবার তাগিদ দিয়েও একটি নিয়মমাফিক ট্রাস্টি বোর্ড গঠনে ব্যার্থ হয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ চলমান সার্বিক অনিয়মগুলো দূর না করে তারা এখন প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টাতে উঠেপড়ে লেগছে। বিজ্ঞজন মনে করছেন প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ-এর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবন/হল কিংবা নিদেনপক্ষে সাভারস্থ আবাসিক ভবনটির নামকরণ করা যেতে পারে। এতেই তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করলে ইতিপূর্বে পাশ করে যাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের সনদ জটিলতাসহ বহুবিধ সমস্যা সামনে এসে হাজির হবে। আবেগ তাড়িত যে কোন সিদ্ধান্ত ভুল হতে বাধ্য।