বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক:গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে রাজি-খুশি রাখতে নিজ ঔরষজাত সন্তানকে হত্যা করেছেন বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) নামে এক ব্যক্তি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ঘাতক বাবা ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে গত ৯ মার্চ সদর উপজেলার পিরুজালী বকচরপাড়ার সানাউল্লাহ মুন্সির বাঁশঝাড়ের পাশে একটি ফাঁকা জায়গা থেকে বিপ্লব হোসেন আকন্দ (১৪) নামে ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পিবিআই কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বিপ্লব হোসেন আকন্দের বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) ও তার সহযোগী ভাগ্নী জামাই এমদাদুলকে (৩৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় সদর উপজেলার পিরুজালী থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান জানান, গত ৮ মার্চ রাত ৮টায় বিপ্লব মসজিদে নামাজ পড়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন ৯ মার্চ সকালে জয়দেবপুর থানার পিরুজালী বকচরপাড়ার সানাউল্লাহ মুন্সির বাঁশঝাড়ের পাশে একটি ফাঁকা জায়গা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের মা খাদিজা আক্তার বাদি হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি থানা পুলিশ একমাস তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় তদন্তভার গাজীপুর জেলার পিবিআইকে দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বাবুল হোসেন আকন্দ ১২ বছর আগে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জুলিয়াকে বিয়ে করেন। এরপর বাবুল তাকে নিয়ে পিরুজালীতে ভাড়াবাসা নিয়ে বসবাস করতেন। এদিকে জুলিয়া প্রায়ই বাবুলের বড় স্ত্রী খাদিজাকে মারধর করতেন। ফলে খাদিজার সঙ্গে জুলিয়ার ঝগড়া লেগেই থাকতো। হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে বাবুলের সঙ্গে ঝগড়া করে জুলিয়া ছোট মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যান। অপর আসামি এমদাদ সম্পর্কে বাবুলের ভাগ্নী জামাই হন। এমদাদের সঙ্গে বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়ার গোপন সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের জেরে জুলিয়া এমদাদকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন ও বাবুলের প্রথম স্ত্রীকে ঘড়ছাড়া করার চেষ্টা করতেন। ঘটনার ১০ দিন আগে জুলিয়া পিরুজালী এসে এমদাদের সঙ্গে দেখা করে বিপ্লবকে হত্যা করার জন্য বাবুলকে রাজি করাতে বলেন।
পরবর্তীতে বাবুল এমদাদুলের পরামর্শে দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুশি রাখতে তার ছোট ছেলে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ মাদরাসা থেকে বাসায় ছুটিতে আসার পর ৮ মার্চ বাবুল বিপ্লবকে নিয়ে এশার নামাজ পড়তে বের হন। এ সময় বাবুল তার ছোট স্ত্রীকে তাবিজ করার কথা বলে বিপ্লবকে দিয়ে প্রতিবেশি খালেকের বাসা থেকে একটি কোদাল আনান।
এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, এমদাদ বিপ্লবকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাওয়ায় ও বাবুল ছেলেকে নিয়ে পিরুজালী বকচরপাড়ার সানাউল্লাহ মুন্সির চালা জমির বাঁশঝাড়ের পাশে নিয়ে যান। এরইমধ্যে বিপ্লব ঝিমিয়ে পড়তে থাকে ও বাড়ি যাওয়ার কথা বলে মাটিতে শুয়ে পড়ে। ঠিক তখন বাবুল কোদাল দিয়ে তার গলায় কোপ দেন। এ সময় সে লাফিয়ে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু বাবুল পুনরায় কোদাল দিয়ে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে কোদালটি পার্শ্ববর্তী ঢাকাইয়ার ধানের জমিতে ফেলে বাসায় চলে আসেন। পরবর্তীতে এমদাদ বাবুলের কথা মতো কোদালটি সেখান থেকে নিয়ে তার বাসায় লুকিয়ে রাখে বলেও জানান পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান।