ভুলে ভুলে সাজানো রণ পরিকল্পনা, আর নিয়মিত ব্যাটিং ব্যর্থতা। ভারতের কাছে ৫০ রানে হেরে আসর থেকে ছিটকে গেলো টাইগাররা। সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের শেষ ম্যাচটি এখন নিয়ম রক্ষার সঙ্গে মান বাঁচানোরও।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আসা একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সমান। নিজের কিংবা ভাড়া করা গাড়ি না থাকলে সেখানে পৌঁছানোটা সহজ নয়। যে কারণে ভারতের সমর্থকরাও এই মাঠে খুব বেশি আসতে পারেনি।
টাইগার-ভক্তদের সংখ্যাটা গ্যালারিতে ১৫ ছাড়িয়েছে কিনা সন্দেহ। নিকট অতীতে বিশ্বকাপে এত কম দর্শক নিয়ে ভারত ম্যাচ খেলেছে কিনা তা মনে পড়ে না। গতকাল টসে জিতে ব্যাটিং শক্তির ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই স্পিন আক্রমণে ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা। শুরু থেকেই টাইগার অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করে ভারত তাদের রানের চাকা সচল রাখে।
৫ উইকেট হারালেও টাইগারদের ১৯৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় রোহিত শর্মার দল। জবাব দিতে প্রতি ম্যাচের মতো ব্যাটিং শিকলবন্দি হয়ে থাকে বাংলাদেশের। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত। অন্যদিকে লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, জাকের আলীরা যথারীতি বন্দি ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে।
ভারতের বিপক্ষে অ্যান্টিগাতে একাদশে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। পেসার তাসকিন আহমেদকে বাদ দিয়ে ফেরানো হয় ব্যাটার জাকের আলী অনিককে! মানে ব্যাটিং শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে কেন পাঠানো হলো! দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রতিপক্ষের অন্যতম শক্তি ব্যাটিং। তাদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে ওপেনিংয়ে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের নামটাই যথেষ্ট। কিন্তু টাইগাররা এখানে খেললেন জুয়া। দুই প্রান্তেই স্পিন আক্রমণ! সিদ্ধান্ত হলো বুমেরাং।
মেহেদী হাসান ও সাকিব আল হাসানকে হাত খুলে খেলে ভারতীয়রা পেয়ে গেল মোমেন্টাম। শেষ পর্যন্ত ভারতের পুঁজি গিয়ে ঠেকলো ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রানে। এই মাঠে টি-টোয়েন্টিতে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। জবাব দিতে নেমে শুরু ব্যাটিং ব্যর্থতার আরেকটি চিত্রনাট্য। যদিও রান তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো করেছিল টাইগাররা।
চার ওভারে ২৭ রান তোলেন দুই ওপেনার। তবে এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় পরের ওভারের তৃতীয় বলে। ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে আবার হার্দিক পান্ডিয়াকে তুলে মারতে যান লিটন। এবার তিনি ক্যাচ দেন পাওয়ার প্লের সময় বাইরে থাকা দুই ফিল্ডারের একজনকে। হার্দিকের স্লোয়ার বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ভালো ক্যাচ নেন সূর্যকুমার। ক্রমেই যে দলের বোঝা হয়ে উঠছেন তার আরেকটি প্রমান রেখে বিদায় নেন লিটন। পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট না হারালেও, যোগ হয় মাত্র ৪২ রান।
এরপর ১০ ওভারের ভেতরই আরও এক উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। কুলদীপ যাদবের গুগলিতে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ হাসান তামিম। ৩১ বল খেলে ২৯ রান করে আউট হন তিনি। নষ্ট করেন রিভিউ। তাওহীদ হৃদয়কে পরের ওভারে এসে ফেরান কুলদীপই। ৬ বলে ৪ রান করে তিনিও এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নষ্ট করেন হৃদয়ও। অধিনায়ক শান্ত এক প্রান্তে কিছু রান করছিলেন। এর মধ্যে উইকেটে এসে আরও একবার ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব। ৭ বলে ১১ রান করে কুলদীপের বলেই রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। শান্ত ফেরেন ৩২ বলে ৪০ রান করে আর্শদীপ সিংয়ের বলে আউট হয়ে। একাদশে একমাত্র বদলটিও কাজে আসেনি। ৪ বলে ১ রান করে আউট হন জাকের আলী।
যদিও শেষ দিকে উইকেটে এসে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। অক্ষর প্যাটেলকে দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। কিন্তু বুমরাহর সামনে আর পেরে ওঠেননি। পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন এক্সট্রা কাভারে দাঁড়ানো রোহিত শর্মার হাতে। ১০ বলে ২৪ রান করে আউট হন রিশাদ। এক বল বাকি থাকতে আউট হওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৫ বলে করেন ১৩ রান। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটিং আরও একবার হতাশ করে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন রোহিত শর্মা। যদিও টাইগাররা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে দ্রুতই। ১১ বলে ২৩ রান করে সাকিব এর বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান করে ভারত। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে দুই উইকেট তুলে নেন তানজিম হাসান সাকিব।
উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে বোল্ড আউট হন বিরাট কোহলি। ২৮ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৭ রান করেন তিনি। এক বল পরই সূর্যকুমার যাদবকে আউট করেন তানজিম। আগের বলে ছক্কা হাঁকানো ব্যাটার এবার ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। উইকেটে এসে শুরুর দিকে থিতু হলেও পরে বাউন্ডারি হাঁকাতে শুরু করেন ঋষভ পান্ত।
তাকে ফেরান রিশাদ। টানা দুই বলে ছক্কা ও চার হাঁকানোর পরের বলে রিভার্স সুইপ করতে যান পান্ত। কিন্তু ক্যাচ যায় শর্ট থার্ড ম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা তানজিমের কাছে। ২৪ বলে ৩৬ রান করে আউট হন তিনি। পান্তের বিদায়ের পর আক্রমণের দায়িত্ব কাঁধে নেন শিবাম দুবে।তাকেও ফেরান রিশাদ।
এবারও আগের বলে ছক্কা খাওয়ার পরের বল ঝুলিয়ে দেন তিনি, তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হন দুবে। ২৪ বলে ৩ ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি। ভারতের হয়ে শেষটা করেন হার্দিক পান্ডিয়া। মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ ওভারে ১৮ রান নেন তারা। স্রেফ ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন পান্ডিয়া। তানজিম হাসান ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন, দুই উইকেট পাওয়া রিশাদ ৪৩ রান দেন।