1. bdweb24@gmail.com : admin :
  2. nemadmin@bongonewsbd24.com : :
  3. him@bdsoftinc.info : Staff Reporter : Staff Reporter
  4. info@wp-security.org : Security_64733 :
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ মনোহরদীতে ৪৬ তম বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত শেরপুরে ঘোড়া জবাই করে পুলিশের হাতে ধরা কালিহাতীতে “তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মানুষ চায় জনগণের সরকার : আমিনুল হক গাইবান্ধায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহতদের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান নরসিংদী জেলা প্রশাসন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত  ৩১ জানুয়ারির পর অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সীমান্ত পরিস্থিতি এখন মোটামুটি স্বাভাবিক- স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মনোহরদীতে ঐতিহ্যবাহী দরগাহ্ মেলা পরিচালনা কমিটি গঠন

চিঠি আর ডাকপিয়ন আজ জাদুঘরের পথে…

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ বার দেখা হয়েছে

সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ ডিজিটাল প্রযুক্তির আধিপত্যে চিঠি আর ডাকপিয়ন আজ জাদুঘরের পথে। বুড়ো ডাকবাক্সের কাজ আজ ফুরিয়েছে প্রায়। মা ছিল ভোলা জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম গ্রামাঞ্চলে, বাবা ঢাকায়। বছর গড়িয়ে যেত; মায়ের দেখা তো দূরের কথা, হত না কথাও। মাসের পর মাস কেবল অপেক্ষা- এই বুঝি এল ডাকপিয়ন। হঠাৎ একদিন, বাসার গেইটে টিংটিং শব্দ করে থামে পুরনো সাইকেল। ফতুয়া পরা মাঝবয়েসী এক লোক উঠে আসে সিঁড়ি বেয়ে। কালো ব্যাগ থেকে বের করে ধরিয়ে দিয়ে যায় হলুদ খাম। “এখন মা আর নেই; সেই চিঠিও আর নেই”, ছলছল চোখে বলছিলেন সাহানা কাদের। ষাটোর্ধ এই রমনী সত্তরের দশকের শেষ দিকে তরুণ বয়সে মায়ের সঙ্গে এভাবেই যোগাযোগের স্মৃতি চারণ করে বলছিলেন, ডাকপিয়ন আসে না আর চিঠি হাতে। তিনি বলেন, “মায়ের একটা চিঠির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করে থাকতাম। মা হয়ত বড়জোর বছরে এক-দুইবার আসতেন। কোনো আত্মীয় এলে তার কাছেও চিঠি দিয়ে দিতেন। সেই চিঠির মধ্যে যে ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, তার তুলনা কোনোকিছুর সঙ্গে হয় না। চিঠি পড়ার সময় মনে হত, মা আমার সামনে বসে কথা বলছে। চিঠিটা স্পর্শ করলে মনে হত মাকেই স্পর্শ করছি। ভাইবোনেরাও ওখানে থাকত। ছয় মাসে হয়ত একবার ল্যান্ডফোনে কথা বলতে পারতাম, কিন্তু চিঠিটাই ছিল যোগাযোগের আসল মাধ্যম। “এখন মোবাইল ফোন আসছে, কিন্তু আগের আবেগ-অনুভূতিটা ছিল একেবারেই অন্যরকম”, বলেন তিনি। প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের আগে মানুষের যোগাযোগের ভরসা ছিল চিঠি। গ্রামে ঢুকলেই ডাকপিয়নকে ঘিরে ধরত লোকজন, যা এখন স্মৃতি। ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রসারে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটেছে উন্নয়ন। ফলে চাকরি-বাকরি আর দাপ্তরিক কাজের বাইরে আর চিঠির চল নেই। ডাকঘরের কাজও আটকে গেছে অফিস-আদালত ঘিরে। চিঠির চল আর না থাকলেও পুরনো সেই যোগাযোগের অনুভূতিটা এখনও মনে করেন বরিশালের নাজমুন নাহার। সাহানা কাদেরের মত একসময় তিনিও থাকতেন চিঠির অপেক্ষায়। “অপেক্ষা করে থাকতাম চিঠি কবে আসবে। পোস্টম্যান এলে মানুষ দৌড়াদৌড়ি করে ঘর থেকে বের হত। ঝটপট খুলে দেখতাম বিপদের খবর, নাকি খুশির খবর।”
একেকটা চিঠি ১৫-২০ দিন পরপর আসত জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন তো সহজ। সঙ্গে সঙ্গেই খবর পাওয়া যায়। তখন তো একটা চিঠি লিখে পোস্টঅফিসে দিতে একদিন সময় লাগত, সেটা যেতে আরও কয়েকদিন। তারপরও চিঠিটা সঙ্গে থেকে যেত। বারবার পড়তাম। মোবাইলে কথা বলে সেই অনুভূতিটা নেই।” বিয়ের পর পড়াশোনার জন্য স্বামীর সঙ্গে বেশকিছু দিন স্থানিক দূরত্বে ছিলেন অভিনেত্রী লাকী ইনাম। দুজনেই অভিনয় জগতের মানুষ। তাদের যোগাযোগের মাধ্যমও ছিল চিঠি। “আমাদের চিঠিগুলো ঠিক গতানুগতিক চিঠির মত ছিল না, সংলাপের মত ছিল। ও তো তখন থেকেই নাটক করত, আমিও নাটক পাগল মানুষ ছিলাম, তাই বর্ণনার চেয়ে নাটকের মতই কথা হত।” এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ চিঠির কথা ভুলে গেছে মন্তব্য করে লাকী ইনাম বলেন, “জীবন সহজ হয়েছে, তবে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্য। চিঠির মাধ্যমে যে মনের কথা বলা যায়, তা মানুষ ভুলেই গেছে। চিঠির মাধ্যমে যেটা হয় ভাষার চর্চা, মানুষের মনের কথাগুলো কীভাবে ভাষায় পরিণত করতে হয়, সেই চর্চাটা হয়। এটা সাহিত্যের মধ্যে পড়ে।” ২৩ বছর ধরে বরিশাল ডাকঘরে পোস্টম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন গোলাম সারোয়ার। এখনও দিনে ৬০ থেকে ৭০টি চিঠি আসে বলে জানান তিনি। “অনেকে কাগজপত্র পাঠায়, চাকরির চিঠি, অফিস-আদালতের চিঠি আসে। কিন্তু আগে যেমন একজন আরেকজনকে চিঠি পাঠাত, এমন চিঠি সচারাচর আসে না। ভেতরে কী লেখা তা তো আমরা জানি না, শুধু বাইরের ঠিকানাটা দেখি।”
ব্যক্তিগত চিঠির পরিমাণ কমলেও ডাকঘর কিংবা তার ব্যস্ততার কমতি নেই বলে জানান সারোয়ার। “অফিসের কাজ করা লাগে। সিল-ছাপ্পর মারতে হয়, মানুষ সঞ্চয়পত্র ভাঙায়, ফাইল টানাহেঁচড়া করতে হয়, দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, ব্যাংকে যাওয়া লাগে, টাকা আনা লাগে। আগে চিঠি নিয়ে যেতে হত, ব্যাংকে যেতাম। তখন লোকবল বেশি ছিল, এখন আমাদের এখানে মাত্র তিনজন। তাই কাজও বেশি।”
আশির দশক থেকে পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে চিঠিতে লেখা পাঠাতেন ছড়াকার সারওয়ার-উল-ইসলাম। চিঠিটা পৌঁছেছে কিনা, সেই অনিশ্চয়তায়ও থাকতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
“ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর পাতায় লেখা পাঠাতাম। লেখাটা যখন প্রকাশ হত, তখন বুঝতে পারতাম লেখাটা গেছে। ডাকের মাধ্যমে অনেক সংখ্যা অর্ডার করতাম, একটা অপেক্ষা থেকে যেত, কবে আসবে।” এখন মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করা গেলেও আগের আবেগ ‘মৃত হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন মিনিটে মেইলের মাধ্যমে লেখা পাঠাতে পারছি। সাথে সাথে ফোন করে বলে, ‘আপনার লেখাটা পেয়েছি, ওমুক দিন যাবে’। “জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখনও অনুভব করি যে, একটা সময় ছিল আমাদের, তা হয়ত আর আসবে না।”
ছোটবেলায় গ্রামে চিঠির চল দেখলেও মোবাইল ফোনের যোগাযোগের পরিবেশেই বড় হয়েছেন ইডেন কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার ফুরকান। তিনি বলেন, “ইচ্ছে হলেই যে কাউকে ভিডিও কলে দেখতে পারছি। কিন্তু যখন তখনই তো দেখা যাবে ভেবে, আবেগটাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।” এখন ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে না এলেও নতুন প্রজন্মের কাছে পার্সেল আসছে অহরহ, সেটাই তাদের অনেকটা পুরোনো দিনের স্বাদ দিচ্ছে।
চিঠিপ্রেমী লুৎফুন্নাহার বলেন, “কিছু একটা অর্ডার করলে কখন আসবে সেই অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকি। বাসার নিচে এসে ডেলিভারিম্যান যখন ফোন করে তখন দৌড়ে যাই। প্যাকেটটা খুলতেও অন্যরকমের আনন্দ কাজ করে।”
ডাক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে তাদের কাজের ধরন বদলেছে। “তখন চিঠি লেখার উপর নির্ভর করা লাগত। এখন লাগছে না। খুব সহজেই দেখা করা যাচ্ছে, তা ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আমরা চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে মেইল করে দিতে পারছি। এখন কথা বলার সাথে সাথে দেখাও যাচ্ছে৷”
ব্যক্তিগত চিঠি আদান-প্রদানের মাত্রা কমলেও প্রাতিষ্ঠানিক চিঠির পরিসর বেড়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ

© ২০২৩ bongonewsbd24.com