বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: নিজের মেয়েকে যৌন নির্যাতনের মামলায় সাবেক এমপিপুত্র, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চিকিৎসক ইব্রাহিম রহমান রুমি বাবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ইব্রাহিম রহমান রুমির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা জজ আদালত-৩ এর বিচারক।
এর আগে, রোববার নিজের মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ইব্রাহিম রহমান রুমির বিরুদ্ধে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রুমির স্ত্রী আফিয়া বিনতে শাহে, তার শিশু কন্যা ও শাশুড়ি মাগফুরা আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে অসহায় দাবি করে নাতনির প্রতি ন্যক্কারজনক অন্যায়ের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিশুর নানি মাগফুরা আহমেদ।
ইব্রাহিম রহমান রুমি ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির উপদেষ্টা মসিউর রহমানের বড় ছেলে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
সংবাদ সম্মেলনে মাগফুরা আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালের ২৬ জুন পারিবারিকভাবে ঝিনাইদহের সাবেক এমপি মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান রুমি বাবুর সঙ্গে আমার মেয়ে আফিয়া বিনতে শাহের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের দুই মাস পর সামান্য কারণে আমার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে রুমি। এরপর বিভিন্ন সময়ে যৌতুক চেয়ে নির্যাতন করতো। সন্তান গর্ভে থাকাকালেও আফিয়াকে মারধর করা হয়। সংসার জীবনে বনিবনা না হওয়ায় গত বছরের ২৬ আগস্ট তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
তিনি আরো বলেন, অব্যাহত নির্যাতনের কারণে আমি ২০১৭ সালে মেয়েকে ইতালি নিয়ে যাই। তখন আমার মেয়ে গর্ভবতী ছিল। এরপর মেয়েকে বুঝিয়ে দেশে আনার ১৫ দিন পর আবারো তার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী। সন্তান জন্মের পরও নানা অজুহাতে দিনদিন নির্যাতন বাড়তে থাকে। সে সময় ঝিনাইদহ থানা পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করে।
মাগফুরা আহমেদ বলেন, গত বছরের ২৩ মার্চ বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় আমার মেয়ের অনুপস্থিতিতে তার চার বছরের শিশুকন্যাকে উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে যায় রুমি। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সে নিজের কন্যাকে কলাবাগানের বাসায় রাখে। ওই সময় ফেরত চাইলেও কন্যাকে নিতে দেয়নি রুমি। পরে ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে শিশুর হেফাজত পায় তার মা আফিয়া। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৮টায় আবারো শিশুসন্তানকে নিজের কলাবাগানের বাসায় নেয় ইব্রাহিম রহমান রুমি। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে মেয়েটিকে উত্তরায় নিজের বাসায় ফিরিয়ে আনে আফিয়া। বাসায় আনার পর শরীরের পোশাক পরিবর্তনের সময় মেয়ের গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নির্যাতনের ছাপ দেখতে পায় সে।
ভুক্তভোগী শিশুটির নানি আরো বলেন, গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত রুমির বাসায় শিশুকন্যার ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়। গত ২৭ নভেম্বর বিকেলে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিশুটিকে ওসিসিতে (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তির জন্য রেফার করেন। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর শিশুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে আমার মেয়ে তার স্বামী ইব্রাহিম রহমান রুমির বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মামলা করে। মামলার পর রুমি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি ধর্ষক ও মাদকাসক্ত ইব্রাহিম রহমান রুমির বিচার চাই।
অভিযুক্ত ইব্রাহিম রহমান রুমি বাবু বলেন, আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহলের ইন্ধনে তারা মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব করে আমাকে কিছুই করতে পারবে না। কারণ আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।